বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়

বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নতুন রঙের ছটা। একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার যে সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তা রয়েছে। ভিন্ন জীবনধারা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর অনন্য শিল্পশৈলীর অফুরান মিশ্রণে ঘেরা আদিবাসী সম্প্রদায়। প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষারীতি কালের স্রোতে বাহিত হয়ে চলেছে তাদের সমাজে। আসুন আজ জেনে নেই কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় সম্পর্কে-

সাঁওতাল

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহৎ নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল। উত্তরের দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলাসমূহে তাদের বসতি। তেভাগা ও স্বদেশী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি নানা ঐতিহাসিক ঘটনায় সাঁওতালদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তারা তাদের পরিচয় দেয় ‘হড়’—অর্থাৎ মানুষ হিসেবে।

মাটির তৈরি প্রায় জানালাবিহীন নিচু দরজাবিশিষ্ট ছোট ছোট ঘরে এরা বাস করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সাঁওতাল মহিলারা বালা, হাঁসুলি, মল ইত্যাদি পরতে এবং খোঁপায় ফুল গুজতে ভালোবাসে। সাঁওতালদের পোশাক ‘পাঁচি’, ‘পাঁচাতাত’ ও ‘মথা’। তবে পুরুষরা থান কাপড়ের ধুতি, লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা এবং নারীরা হাতেবোনা শাড়িও পড়ে।

সাঁওতালদের মধ্যে ছয় রকম বিবাহপ্রথা চালু আছে এবং শুধু বহিঃগোত্র বিবাহের চল আছে। অভিভাবকের পছন্দ অনুসারে বিয়েকে সাঁওতালি ভাষায় ‘ডাঙুয়াবাপলা’ বলে। সাঁওতালরা মূলত কৃষিকাজ করে। কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি নিজেরাই তৈরি করে। এগুলোতে শ্রদ্ধাবশত সিঁদুরের ফোঁটা দেয়।

তারা নবান্ন, হোলি, সোহরাই, দাসাই, বাহা প্রভৃতি উৎসব পালন করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব গান, সংস্কৃতি এবং নৃত্যভঙ্গিমা। মাদল, দমা ও বাঁশি এদের প্রধান বাদ্যযন্ত্র। এদের প্রধান খাদ্য ভাত। এর পাশাপাশি মাছ, মুরগি, ইঁদুর, বেজি, খরগোশ, গুঁইসাপ, সবজি, শুকর, কাঁকরা প্রভৃতি খায়। সাঁওতালি ভাষায় দেবতাকে বলে ‘বোংগা’। এদের প্রধান দেবতা সূর্য। পাহাড়ের দেবতা হলো ‘মারাংমুরো’ এবং গৃহদেবতার নাম ‘বোঞ্চার’। শবদাহ করার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে অর্থাভাবে এরা মৃতদেহ কবর দেয়।

মারমা

মারমা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী। এরা জাতিগতভাবে বর্মী বা বার্মিজদের উত্তরসূরি। মারমা নামটির উৎপত্তি ‘ম্রাইমা’ থেকে। যা কি না মায়ানমারের জাতীয়তাবাদ থেকে আগত। মারমাদের ভাষা বার্মিজ থেকে আগত একটি উপভাষা। তাদের বর্ণমালাকে ‘মারমাজা’ বা ‘মারিমাচা’ বলে। মারমা পুরুষরা কোমর থেকে হাঁটু অবধি লম্বা ‘দেয়াহ’ পড়ে। কেউ কেউ ‘খিয়ক’ নামক কোমর থেকে গোড়ালি অবধি লম্বা কাপড় পরে। উপরিভাগে ‘বারিস্তা’ নামক পোশাক এবং মাথায় ‘খবং’ নামক পাগড়ি পরিধান করে। মহিলারা উপরিভাগে ‘বেদাই উঙ্গি’ এবং নিম্নভাগে ‘থবিং’ কিংবা ‘থামি’ পরে। এছাড়াও পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই লুঙ্গি পরার চল আছে।

এদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক এবং পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারে ছেলে ও মেয়ের অংশীদারিত্ব সমান। মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং এদের ধর্মগ্রন্থ হলো ‘খাদুত্তিয়াং’। এদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সাংগ্রিয়া, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, ওয়াহগ্যই, ওয়াছো পোয়ে, পইংজ্রা পোয়ে ইত্যাদি। মারমারা ভাত, সবজি, মাছ-মাংস, ফল-মূল, কন্দ খেয়ে থাকে। তোহজা, নাপি বা আওয়াংপি ইত্যাদি বিশেষ খাবার। তারা জুম চাষ, দিনমজুরি, ঝুড়ি বানানো, হাতে কাপড় বোনার কাজ করে। মারমারাও ধীরে ধীরে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে।

গারো

গারোরা ‘মান্দি’ যার অর্থ মানুষ বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। ময়মনসিংহ ও সিলেটের আদিবাসী সম্প্রদায় তারা। এরা শক্তশালী মাঝারি দেহাবয়ব, চ্যাপ্টা নাক ও ছোট চোখ বিশিষ্ট হয়। তাদের আদি ধর্মের নাম সাংসারেক। গারোদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। গারোদের ভাষা হলো মান্দি ভাষা।

গারোরা মুরগি, হাঁস, গরু, ছাগল, শুকর প্রভৃতি খায়। এরা গরুর দুধ খায় না। বিড়াল গারোদের টোটেম হওয়ায় বিড়ালও খায় না। পুঁটি মাছের শুঁটকি দিয়ে তৈরি ‘নাখাম কারি’ এদের খুব প্রিয় খাবার। মদ তাদের অন্যতম প্রিয় পানীয়। গারোদের মধ্যে গোত্রবিবাহ নিষিদ্ধ। গারোরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী। সমাজে ছেলেরা অবহেলিত এবং মায়ের মৃত্যুর পর বাবার প্রতি মেয়ের কোন দায়িত্ব থাকে না। এদের আদি পেশা জুমচাষ হলেও বর্তমানে এরা আধুনিক কৃষিকাজের পাশাপাশি নানান পেশায় জড়িত।

জৈন্তিয়া

সিনতেং (Synteng) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এ গোষ্ঠীর দৈহিক গড়ন মঙ্গোলয়েড। তাদের কিছু অংশ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় বসবাস করে। এদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও বর্ণমালা নেই। জৈন্তিয়াদের স্বাক্ষরতার হার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ যা বৃহত্তর সিলেটের সব উপজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ। জৈন্তিয়া নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এবং মাথায় খাসিয়াদের অনুরূপ কাপড় বাঁধে।

এরা মূলত কৃষিকাজ করে, পান, সুপারি প্রভৃতি উৎপাদন করে। শুকরের মাংস এদের অন্যতম প্রিয় খাবার। এছাড়াও ভাত, সবজি, মাছ, খাসির মাংস, মুরগি, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, চা প্রভৃতি খেতে পছন্দ করে। ‘হকতই’ এদের অন্যতম উৎসব যা দুই দিনব্যাপী পালিত হয়। ‘যত নৃত্য, তত ফলন’– এ প্রবাদে বিশ্বাসী হয়ে বিভিন্ন উৎসবে নিজস্ব ভঙ্গিমায় নৃত্য পরিবেশন করে।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরারা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাস করে। তারা ককবরক বা হিলাম ভাষায় কথা বলে। এদের কোন নিজস্ব বর্ণমালা নেই। পুরুষেরা খবং, ধুতি এবং মেয়েরা থামি, রিং-নাই, খাদি পড়ে। পুরুষ এবং নারীদের জাতীয় পোশাক যথাক্রমে রিমতাই, কুবাই এবং রিনাই, রিসা। নারীরা ভিন্নধর্মী গহনাও পরে। এদের নিজস্ব দেবতার পাশাপাশি অনেকে হিন্দু ধর্মের কিছু দেবতারও আরাধনা করে। এরা চাষের পাশাপাশি অন্য পেশায়ও নিয়োজিত।

মণিপুরী

বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের মণিপুরের অধিবাসী এরা। এদের ভাষা মেইতেই লন। এরা বিষ্ণুপ্রিয়া, মৈতৈ ও পাঙন নামক শ্রেণিতে বিভক্ত। এদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে এদের গীত ও অপূর্ব নৃত্য। অপোকপা এবং চৈতন্য ধারার সনাতনী ধর্মমতে বিশ্বাস করে। দোল পূর্ণিমায় মুক্তমাঠে নৃত্য করে। এদের অন্যতম উৎসব রাসপূর্ণিমা। হাতেবোনা কাপড় ও হস্তশিল্পে মণিপুরীরা অত্যন্ত দক্ষ।

ম্রো বা মুরং

মুরং শব্দটির একবচন ‘ম্রো’ যার অর্থ মানুষ। ম্রো ভাষায় এরা নিজেদের মারুচা বলে থাকে। মেয়েরা ‘ওয়াংকাই’ এবং পুরুষরা ‘ডং’ পরে। ছেলেরা মাথায় চিরুনি এবং মেয়েরা ফুল গুজে রাখে। একই গোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। শরীরে রঙের প্রলেপ ব্যবহার করে। প্রকৃতি পূজারী এবং শুধু ইহকালে বিশ্বাসী। এদের নিজস্ব নাচ এবং ক্লং নামক বাঁশির ব্যবহার রয়েছে।

পছন্দের রং বলে দেবে আপনার বৈশিষ্ট্য

আপনার পছন্দের রং কোনটি? কোনো উজ্জ্বল বা হালকা রং কি আপনাকে বেশি প্রভাবিত করে? তা-ই যদি হয়, তাহলে আপনার পছন্দের রং-ই বলে দেবে আপনার বৈশিষ্ট্য। মানুষের বিশেষ কিছু দিক খুব সহজেই বোঝা যায় তার পছন্দের রং দিয়ে।

বেগুনি
তিনি একজন পারফেকশনিস্ট। যেকোন কাজ নিখুঁতভাবে করাটাই তার ব্যক্তিত্বের মাপকাঠি। অত্যন্ত আবেগপ্রবণও।

নীল
তারা রক্ষণশীল। নিজস্ব চিন্তাধারা ও বিশ্বাস নিয়ে বাঁচেন। অন্যকে খুশি করার জন্য নিজের আদর্শ কখনোই বদলান না।

আকাশি
তিনি অত্যন্ত সৎ ও সহানুভূতিশীল। যে কারণে খুব সহজেই মানুষ তাকে বিশ্বাস করতে পারে।

 

সবুজ
তারা খুব অল্পতেই খুশি হন। নিজের কাজের সামান্যতম স্বীকৃতি পেলেই অনেক আনন্দ পান।

হলুদ
যুক্তিই তাকে বর্ণনা করে। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বিষয়েই তিনি যুক্তি খুঁজে বেড়ান।

 

কমলা
তারা অনেক সামাজিক হন। মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করেন। সবাই তাদের খুব সহজেই গ্রহণ করে নেয়।

লাল
লাল রং যারা পছন্দ করেন; তারা অত্যন্ত বহির্মুখী হন। তাদের জীবন হয় ‘অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড’। তারা খুবই কর্মতৎপর ও আত্মবিশ্বাসী।

সাদা
তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। খুবই খোলা মনের মানুষ হন। তাই সামান্যতম খুঁত দেখলেই বিরক্ত হন।

 

কালো
তারা এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, সহজে কেউ তাদের নাগাল পায় না। তারা অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

দাঁত ব্রাশ ছাড়াও টুথপেস্টের ১০টি কাজ

দাঁত পরিষ্কার করতে চুলার ছাই বা মেসওয়াকের যুগ চলে গেছে অনেক আগেই। এসেছে টুথব্রাশ এবং টুথপেস্টের ব্যবহার। ঝকঝকে দাঁতের জন্য টুথপেস্ট অপরিহার্য। তবে দাঁত ব্রাশ করা ছাড়াও টুথপেস্টের আরো ব্যবহার রয়েছে। যেগুলোর সঙ্গে মুখের বা দাঁতের কোনো সম্পর্ক নেই—

মোবাইল স্ক্রিন
মোবাইলে স্ক্রিনে বিভিন্ন রকমের আঁচড়ের দাগ পড়ে যায়। এ ধরনের মোবাইলের স্ক্রিনে অল্প একটু টুথপেস্ট লাগিয়ে আঙুল দিয়ে ঘঁষে দিন। তারপর কাপড়ের টুকরো সামান্য পানিতে ভিজিয়ে স্ক্রিনটি মুছে নিন।

দেয়ালে আঁকাআঁকি
বাচ্চারা দেয়ালে রং পেন্সিল বা প্যাস্টেল দিয়ে আঁকাআঁকি করবেই। সেক্ষেত্রে একটু টুথপেস্ট দেয়ালের দাগের ওপর লাগিয়ে সামান্য ভেজা কাপড় দিয়ে ঘঁষে দিন। তারপর পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন।

 

কাপড়ের দাগ
কাপড়ে তেল, মশলা বা কালির দাগ লেগে যায়। চিন্তা নেই, অল্প একটু টুথপেস্ট দাগ-লাগা জায়গাটিতে ঘঁষে নিন। তারপর স্বাভাবিকভাবে সাবান পানিতে ধুয়ে নিন।

বোতলের দুর্গন্ধ
বাচ্চাদের ফিডিং বোতলে দুর্গন্ধ হয়। সেক্ষেত্রে বোতলটিতে অল্প পানি দিন, তারপর বোতলের ভেতর একটু টুথপেস্ট ফেলে বোতলের মুখ বন্ধ করে ঝাঁকিয়ে পানিটা ফেলে দিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন।

পোকামাকড়ের কামড়
মশা, পিঁপড়া বা মৌমাছি জাতীয় পোকা কামড়ালে অল্প একটু টুথপেস্ট লাগিয়ে দেন, দেখবেন কামড়ের জ্বালা অনেক কমে গিয়েছে।

ফোসকার যন্ত্রণা
ফোসকা পড়ে গেলে অল্প একটু টুথপেস্ট লাগিয়ে দিলে ফোসকার জ্বালা, যন্ত্রণা একেবারে কমে যাবে।

 

হাতের দুর্গন্ধ
হাত দিয়ে খাওয়ার পর সাবান দিয়ে ধোওয়ার পরেও তেল, মশলা বা পেঁয়াজের গন্ধ যায় না। সেক্ষেত্রে একটু টুথপেস্ট ঘঁষে নিন হাতে। তারপর স্বাভাবিকভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন হাত।

নখ পরিষ্কার
নখের ওপর একটু টুথপেস্ট লাগিয়ে টুথব্রাশ দিয়ে অল্প ঘঁষে নিন। এতে শুধু যে নখ পরিষ্কার হবে তা নয়, পাশাপাশি নখ চকচকেও হবে।

হেয়ার জেল
হেয়ার জেল যে উপাদান দিয়ে তৈরি হয়; সেই একই উপাদান দিয়ে তৈরি হয় টুথপেস্ট। কাজেই গোসল করার সময় টুথপেস্ট দিয়ে চুল ধুলে কোনো ক্ষতি হয় না, বরং চুল ভালো থাকবে।

 

বেসিন পরিষ্কার
বাথরুম বা রান্নাঘরের বেসিনে সামান্য টুথপেস্ট লাগিয়ে স্ক্রাবার দিয়ে আলতো ঘঁষে নিন। তাহলে ঝকঝক করবে বেসিন।

ফেসবুক তারকা হতে চাইলে!

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফেসবুক অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। ফেসবুক ব্যবহার করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অনেকেই রাতারাতি হয়ে উঠেছেন ফেসবুক তারকা। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? সেজন্য ফেসবুক ব্যবহারের আগে জানতে হবে কিছু বিষয়। তবে আপনিও হয়ে উঠবেন একজন ফেসবুক সেলেব্রিটি।

 

• নিজে থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
• কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট প্রত্যাখান করলে তাকে বিরক্ত করা যাবে না।
• গুরুত্ব বুঝে লাইক দিন। সবকিছুতে লাইক দিলে আপনি গুরুত্ব হারাবেন।
• পোস্টের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক না হলে কাউকে ট্যাগ করবেন না। এতে অনেকে বিরক্ত হন।
• বন্যা-ভূমিকম্পের মতো বিপদ-আপদের খবর শেয়ার করুন।
• সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নিজের যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য পোস্ট দিন।
• গান, সিনেমা, বই বিষয়ে রিভিউ দিন। তবে জ্ঞান কম থাকলে লিখবেন না।
• নিয়মিত প্রোফাইল পিকচার বদলান। তবে আলোকচিত্রীর নামোল্লেখ করতে ভুলবেন না।
• মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রসবোধ।

 

• পছন্দের বিষয় নিয়ে একটি পেজ শুরু করুন।
• ফেসবুকের মাধ্যমে সামাজিক কর্তব্য পালন করুন।
• জন্মদিনে বন্ধুদের ‘উইশ’ করতে ভুলবেন না।
• অশ্লীল বা সাম্প্রদায়িক পেজে লাইক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
• পোস্ট ও পেজের কনটেন্ট পাবলিক করে রাখুন।
• বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দিন। সেখান থেকে বেছে বেছে পছন্দের মানুষকে অ্যাড করুন।
• নিজের উৎসাহে বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দিয়ে মতামত বিনিময় করুন।
• পারলে কয়েকজন ফেসবুক সেলিব্রেটির সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন।
• ছুটির দিনে রাতে বা ছুটির আগের দিনে রাতে পোস্ট খুবই কার্যকরী।

ফেসবুক হোক উদীয়মান লেখকের চারণভূমি

কী লিখব, কিভাবে শুরু করবো; তার জন্য কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। সাংবাদিকের জন্য ভূমিকা বা প্রারম্ভিকতা খুঁজে বের করা চিন্তার ব্যাপার। পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ বা প্রতিবেদন লেখার শুরু কয়েকটা বাক্যকে ইন্ট্রো বলা হয়। ইন্ট্রো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠক পড়া শুরু করে ভালো লাগলে শেষ করে। সুতরাং শুরুটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমি যখন কোন একটি বিষয়ে লেখার জন্য মনস্থির করি। তখন বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবি। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে একটু পড়াশোনার চেষ্টা করি। সময়-সুযোগ হলে বন্ধুদের সাথে একটু আলাপ করে নেই। তারপর লেখা শুরু করি। সাধারণত প্রথম একটি প্যারা লেখার পর বিরতি দেই। আবার ভাবি, পড়াশোনা করি বিষয়টির উপর। এরপর আবার লেখা শুরু করি। এভাবে একটি প্রবন্ধ লিখতেই কমপক্ষে দু’দিন লেগে যায়। শেষে পত্রিকায় মেইল করার প্রস্তুতি হিসেবে বাক্যগঠন, বানান প্রভৃতি ঠিক করার চেষ্টা করি। তারপর সংশ্লিষ্ট পত্রিকাতে নিয়মিত চোখ রাখি। কবে প্রকাশিত হবে। প্রকাশিত হলেই যে সেটিকে ছেড়ে দেই, তা নয়। সেটা আবার পড়ি। দেখি কোন জায়গায় কী পরিমার্জন, পরিবর্তন হলো।

এভাবেই একটি প্রবন্ধ পরিপূর্ণতা পায়। কয়েকটি লেখা ছাপাতে দেরি হলে যোগাযোগ করি, উত্তর মেলে বক্তব্য স্পষ্ট নয়। পরিবর্তন করে দেই, তখন তারা বিবেচনা করে প্রকাশ করে। পুরো ব্যাপারটার সময়ে আমি একটু ঘোরের মধ্যে থাকি। আর প্রকাশ হলে অন্যরকম অনুভূতি। এই ভালো লাগা অনুভূতি দুই কারণে হয়। প্রথমত, অভিজ্ঞ সম্পাদক এটাকে প্রকাশযোগ্য করে পাঠককে জানানোর তাগিদে প্রকাশ করেন। দ্বিতীয়ত, প্রকাশিত প্রবন্ধটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এবং বন্ধু-বান্ধবের ডিজিটাল করতালি নেওয়া।

যা হোক, চাইলেই তো আর ভালো লেখা যায় না। এজন্য প্রচুর প্রস্তুতি নিতে হয়। কয়েকটি বিষয় সামনে রাখতে হয়। কী লিখবো? কেন লিখব? কাদের জন্য লিখব? অর্থাৎ আমার পাঠক কারা? কোন শ্রেণির, কোন বয়সের? প্রবন্ধ লেখার জন্য এটি খুবই অনস্বীকার্য। ব্যবসার জন্য পণ্য, ক্রেতা, বিক্রয়ের স্থান নিয়ে ভাবতে হয়, তেমনি লেখার জন্য কী বিষয়, পাঠক কারা, কোন পত্রিকায় কোন পাতার জন্য উপযোগী- তা নিয়ে ভাবতে হয়। সব মিলিয়ে একটি প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়, লেখাটি জাতীয় দৈনিক না কি অনলাইন পোর্টালের জন্য? যদিও এটা নির্ভর করে বিষয়বস্তুর ওপর।

 

২০১৪ সালের শুরুর দিকে জোরালোভাবে ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস লিখতে শুরু করি। বন্ধুরা উৎসাহ দিতে থাকে। একসময় ভালো লাগা বাড়তে থাকে। ভাবলাম, যে পরিমাণ সময় ফেসবুকে দেই, আরেকটু দিলে তো পত্রিকায় লিখতে পারি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। এছাড়া ২০০৬ সালে দৈনিক আজকের কাগজ ও যায়যায়দিন পত্রিকায় কিছুদিন প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। ২০০৯ সাল থেকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হই। বর্তমানে যেহেতু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত; তাই অপ্রয়োজনে ফেসবুকে সময় কাটাতে পারছি না বা সময় নষ্ট করার সময় পাই না। তাই বলে ফেসবুক ব্যবহার কম করি তা কিন্তু নয়- সেটা প্রয়োজনীয় মাত্রায়।

সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম ফেসবুক। স্বাধীন মত প্রকাশ তথা লেখালেখির ভুবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত হচ্ছে ফেসবুক অভ্রের শুভ্রতা দিয়ে। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের অনেকেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে ফেসবুকের আশীর্বাদ গ্রহণ করছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। লেখার মাধ্যমে তারা নিজেদের ইচ্ছা, সুখ-দুঃখ, আবিষ্কার, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরছেন। অনেকে অপ্রকাশিত কবিতা, অর্জন, ভ্রমণ কাহিনি, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ পোস্ট করছেন। ফেসবুকের সূত্রপাত না হলে এসব সৃজনশীলতা হয়তো দেখতে পেতাম না। ‘নাগরিক সাংবাদিকতা’র ছোঁয়ায় অনেক সময় ফেসবুকের নিউজফিডে ভেসে আসে বিভিন্ন নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অনেক ক্ষেত্রে এসবের প্রতিকারও আমরা দেখতে পাই। বিভিন্ন পোস্ট পাই প্রবাদ বাক্যের, সুখবর, হাসি-তামাসা ও সু-পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় তথ্য। পুরনো বন্ধুদের খোঁজ, নতুনদের সার্কেল বাড়ানো- সবই হয়েছে এই যোগাযোগের ব্যাপ্তিতে। দেশে-বিদেশে বয়সভেদে চলছে কুশল বিনিময়। বিশেষ দিন, জন্মদিন বা নতুন সংসারের শুভকামনা অনেকের জীবনে নতুন প্রেরণা জাগায়। দুঃসংবাদ বা দুর্ঘটনাতে মিলছে সান্ত্বনা বা শোকবার্তা। ফেসবুকের বদান্যতা না থাকলে শিশু রাজনের হত্যাকারীরা হয়তো পার পেয়ে যেত। অনেক জরুরি অবস্থা বা বিপদে পড়েও অনেক সহযোগিতা মিলছে। যেমন হঠাৎ করেই কোন মুমূর্ষু রোগির জন্য রক্তের প্রয়োজন। ফেসবুকের কল্যাণে অনেক অপরিচিত মানুষ রক্ত দিয়ে সাহায্য করছে। অনেকে হারানো ছেলে-মেয়েকেও ফিরে পেয়েছে।

তবে কিছু নেতিবাচক দিকও যে রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আসলে পৃথিবীর সবকিছু ভালো ও মন্দের সংমিশ্রণ। ফেসবুকের ব্যাপারটা হয়েছে বটবৃক্ষের মতো। অক্সিজেন ও ছায়া দেবে, আবার উপড়ে যেতে পারে। কে কোন দৃষ্টিভঙ্গি বা উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহার করছে- সেটাই বিচার্য। নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে আইডি চুরি, অযথা বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি, অধিক সময় ব্যয় করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগ কম দেওয়া প্রভৃতি। যদিও এগুলো শুধরে নেওয়া যায় একটু সচেতন হলে। এছাড়া বড় ধরনের মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে দেশের বা কারো ব্যক্তিগত ক্ষতিও হতে পারে। সেইসঙ্গে ফেসবুক এখন সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। বিষয়টি সাধুবাদযোগ্য। ‘আরব স্প্রিং’র মতো বিপ্লব ঘটাতে ফেসবুক অসামান্য অবদান রেখেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশে গণজাগরণ মঞ্চ, শিক্ষায় ভ্যাট প্রত্যাহার, তনু হত্যার বিচারের দাবি আদায়ের মতো বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে ফেসবুক।

সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেককেই তাড়া করে ফেরে আর সামাজিক যোগাযোগ দেয় হাতছানি। এই দুয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করাটাই এখন অনেকে ‘কিছু একটা করার উপায়’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সেটা হতে পারে দেশের জন্য, দশের জন্য। তারা বুঝে গেছেন, একা একা কিছু করা কঠিন। তাই সহজ অথচ কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে এ ডিজিটাল প্লাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন। কেননা ফেসবুকের সুবাদে একজন পাঁচ হাজার বন্ধু বানাতে পারেন। আর তাকে ফলো করতে পারে অগণিত মানুষ। সবাইকে একছাতার তলে আনা সম্ভব না হলেও কিছুসংখ্যক তো আসবেই। এভাবে ‘নেট প্র্যাকটিস’ চালিয়ে যেতে হবে নতুন সৃষ্টির লক্ষে।

আমরা যারা ভালো লিখতে পারি না অথচ ভালো ফেসবুক পাঠক; তারা কিন্তু এগিয়ে আসতে পারি। সুপারিশের তীর নিক্ষেপ, তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা যদি দু-এক বাক্য মন্তবের ঘরে জুড়ে দেই, তবেই কর্ম সম্পাদন হয়ে যায়। আমাদের মধ্যে অনেকেই শুধু ‘পছন্দের’ বাটন চেপে দৌড়ে পালান, অনেকে ভাবেন- সময় কোথা সময় নষ্ট করার। তাতে হয়তো নব্য লেখকদের সান্ত্বনা মেলে কিন্তু খুব একটা উৎসাহ পান না। উৎসাহের জন্য দরকার বাক্য বিনিময়। সমান আলোচনা, ভালো ও মন্দ।

 

গতবছর এপ্রিলে ফেসবুকের এফ ৮ নামের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলনে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বেশকিছু টুল উন্মুক্ত করেছে। ফেসবুকের ডেভেলপার প্ল্যাটফর্ম গ্রুপের প্রধান ডেব লিউ তার কি নোট দেওয়ার সময় ফেসবুকের কোট শেয়ারিং ফিচারটির কথা বলেন। এ ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার প্রিয় লেখাটির কোনো কপি-পেস্ট ছাড়াই হাইলাইট দেখতে পাবেন। ফেসবুক সেভ বাটন নামের আরেকটি নতুন ফিচার উন্মুক্ত করেছে, যা ২০১৪ সালে সেভ অন ফেসবুক ফিচারটির মতোই ব্যবহারকারীকে তার প্রিয় লেখা, পণ্য, ভিডিও ফেসবুক সেভ ফোল্ডারে সংরক্ষণ করার সুবিধা দেবে। উল্লেখ্য, প্রতিমাসে ২৫ কোটি ব্যবহারকারী ফেসবুকের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সংরক্ষণ করে রাখে।

ফেসবুকের লক্ষ্য- গতবছরে ফেসবুকের ডেভেলপার কমিউনিটি ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে ফেসবুকে ২.১ বিলিয়ন মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে। ওই সম্মেলনে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের ৭শ’ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনার কথা জানান। এছাড়া তিনি বিগত ১২ বছরের সাফল্য তুলে ধরেন এবং আগামী ১২ বছরের একটি রূপরেখা ব্যাখ্যা করেন। এখানে সাহিত্যকে সমৃদ্ধি করতে ওই রূপরেখায় কিছু উল্লেখ না করলেও এটা যে একটা আলাদা প্লাটফর্ম তৈরি করতে যাচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আশা করছি, ফেসবুক অঙ্গনের অনেক শখের কর্মী হয়তো সামনে নামকরা লেখক হয়ে উঠবেন। তাই পাঠকের কাছে বিনয়-তারা যেন এক পা এগিয়ে আসেন। পরিশেষে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল লেখনী বা প্রচারের মাধ্যম ফেসবুক সমাজ উন্নয়নে ‘বিদ্যাপীঠ’ হিসেবে কাজ করুক- সেই প্রত্যাশা। আর ফেসবুকের উদীয়মান লেখকদের জন্য রইলো অগ্রীম হাজারটা লাইক ও শুভকামনা।

তরুণদের আইডল সোলায়মান সুখন

পুরো নাম খন্দকার মোহাম্মদ সোলায়মান হলেও তিনি ‘সোলায়মান সুখন’ নামেই পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লাখ লাখ মানুষের উৎসাহদাতা। তরুণ প্রজন্মের কাছে আইডল। জীবন সংগ্রামের ভাঙা-গড়ার অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়ে প্রেরণা জোগান। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে তৈরি করেন জনসচেতনতা। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নয়; বিভিন্ন সেমিনার ও জাতীয় অনুষ্ঠানে কথার জাদু ছড়িয়ে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সুখন জাগো নিউজকে শুনিয়েছেন আজকের সোলায়মান সুখন হয়ে ওঠার গল্প।

শুরুর গল্প
১৯৮০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যশোর সেনানিবাসে জন্ম সোলায়মান সুখনের। বাবা আব্দুল ওয়াদুদ সাবেক সেনা সদস্য আর মা সামসুন নাহার খন্দকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ছেলেবেলায় ঈদের সময় তিন ভাই-বোনের জন্য আলাদা করে নতুন জামা-কাপড় কেনা হতো না। কারো জন্য জামা আর কারো জন্য প্যান্ট। এমন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সুখনের। শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল মায়ের হাতে আঁকা বই দিয়ে। স্কুলে ভর্তির পর বইয়ের সংকট থাকায় মা নিজের হাতে এঁকে এঁকে তৈরি করে দিয়েছিলেন প্রথম শ্রেণির আমার বাংলা বই। সেই ভিন্নধর্মী বই নিয়ে তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল বন্ধুরাও। বাবার চাকরিসূত্রে বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করতে হয়েছে সুখনের। জালালাবাদ সেনানিবাস উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু হয় শিক্ষা জীবন। এরপর বিভিন্ন স্কুল পেরিয়ে ১৯৯৫ সালে মুসলিম মডার্ন একাডেমি থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি থেকে কমিশন প্রাপ্ত হন। এরপর চাকরি ছেড়ে বন্ধুর পরামর্শে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (আইবিএ)। ২০০৫ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর চাকরি করেছেন দেশের নামিদামি সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে।

 

এগিয়ে চলা
বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির চাকরি ছেড়ে সুখন যখন ঢাকায় পা রেখেছিলেন তখন ভাড়া দেওয়ার পর পকেটে অবশিষ্ট ছিলো মাত্র ৭শ’ টাকা। পকেটে টাকা না থাকলেও বুক পকেটে ছিলো স্বপ্ন। ঢাকায় এসে বন্ধুর সাথে থাকা শুরু করেছিলেন বুয়েটের হোস্টেলে। বন্ধুর পরামর্শে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে। পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন নিজের স্বপ্নের চাকরিতে। ছোটবেলার দুষ্টু সেই মেধাবী সুখন কর্মজীবনেও সফল। এত সফলতার মাঝেও তিনি আজ জনপ্রিয় ভিন্ন কারণে। জনপ্রিয়তার কারণ তার কথার জাদু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৮ সালে। প্রথমে ব্যক্তিগত জীবন ও হাসির ভিডিও আপলোড করতেন। দেখলেন এসব ভিডিওতে সাড়া পাচ্ছেন। তারপর শুরু করলেন ফোন বা নতুন ডিভাইসের রিভিউ করা।এসবের মাঝে তিনি ভেবে দেখলেন, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। তিনি লক্ষ্য করলেন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে। তিনি তখন ফেসবুকে অনন্ত জলিলের পক্ষে নিজের মতামত তুলে ধরেন। যা সেইসময় ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া পায়। তার আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তার দেওয়া বক্তব্যও ফেসবুকে তুমুল সাড়া ফেলে। সেই থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে চলেছেন সুখন।

অন্তর্জালে সাম্রাজ্য
ফেসবুকে সমসাময়িক অনুপ্রেরণামূলক স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও পোস্ট করার কারণে ইতোমধ্যেই তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন সুখন। তিনি বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও পোস্ট করি। এ কারণে আমার পোস্টে ব্যবহারকারীরা লাইক দেয়। আর এই লাইক হয়তো আমাকে ফেসবুকে বিখ্যাত করেছে। কিন্তু যারা লাইক দিচ্ছেন তারা যদি আমার লেখাগুলো বা আমি কী বোঝাতে চেয়েছি তা বুঝে নেন, নিয়মগুলো মেনে চলেন তাহলে তারাও নিজের জীবন পরিবর্তন করে উন্নতি করতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’ এভাবেই জোগাচ্ছেন তারুণ্যের অনুপ্রেরণা। তার কথার জাদুতেই কোন তারকা না হয়েও তিনি ফেসবুকের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।রয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ৪১ হাজারেও বেশি ফলোয়ার। এছাড়া ২০০৯ সালে ইউটিউবে যোগ দেওয়া সুখনের এসব অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য তার ইউটিউব চ্যানেল থেকে দেখা হয়েছে ২ কোটি মিনিটের বেশি।

 

আন্তর্জাতিক অঙ্গন
শুধু ইন্টারনেট দুনিয়ায় থেমে নেই সুখন। জাতীয়-আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে কথার জাদু ছড়িয়ে সাড়া ফেলেছেন সুখন।এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন সুখন। তিনি বলেন, ‘আমি কোন সুদর্শন ব্যক্তি না, কোন তারকা না, তবুও এ পর্যন্ত আমি যতগুলো অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছি এটা দেখে অবাক হয়েছি- সামনের কোন চেয়ার খালি ছিলো না।’ কিভাবে এই কথার জাদু শিখলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সুখন বলেন, ‘ছোটবেলায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতিদের সরাসরি বক্তব্য দেওয়া শুনে খুব ইচ্ছে হতো, আমি যদি এমন বক্তব্য দিতে পারতাম। এরপর সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলার প্রযুক্তি আসলো হাতের কাছে। সেখান থেকে শুরু। এছাড়া আমি ছোট থেকে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি নিউজের হেডলাইন পড়তাম, সেখান থেকে আমি সমসাময়িক কোন ব্যাপারে কথা বলা যায় সেটা ঠিক করতাম। আর যারা বক্তব্য দেয় তারা কিভাবে কথা বলে, কথা বলার সময় তাদের শারীরিক ভাষা খেয়াল করতাম।’ নিজের জনপ্রিয়তার কারণও জানালেন তিনি, ‘আমাদের দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যতটা জরুরি তার চেয়ে মত প্রকাশের শালীনতা রাখা জরুরি। সেটার চেষ্টা করেছি, তাই মানুষ পজেটিভভাবে নিয়েছে।’

সুখনের প্রিয়
কথার জাদুকর সুখনেরও রয়েছে প্রিয় বক্তা। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের বক্তব্য তার ভালো লাগে। এছাড়া স্যার রিচার্ড ব্রানসন রয়েছেন তার প্রিয় বক্তার তালিকায়। জনপ্রিয় হওয়ার আগে স্যার রিচার্ড ব্রানসনকে টুইট করেছিলেন তিনি। সুখনের কথার জাদুতে মুগ্ধ হয়ে রি-টুইটও করেছিলেন স্যার রিচার্ড ব্রানসন। সুখনের প্রিয় বন্ধুর তালিকা অনেক বড় হলেও সেই তালিকায় অন্যতম হচ্ছেন সেনা কর্মকর্তা রাশিদ। প্রিয় খাবার গরুর মাংস ভুনা, প্রিয় রং কালো। ঘুরতে পছন্দ করেন পাহাড়ি এলাকায়।

 

স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান
একদিন রেস্টুরেন্টে বসে দেখলেন কমেডি ক্লাবের নাভিদ মাহবুব একটি পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। সে সময় পাশের সিটে বসা নাভিদের কথাগুলো সুখনের মনে ধরে। সে সময় নাভিদ মাহবুবকে জানালেন তার আগ্রহের কথা। নাভিদ মাহবুব একদিন দাওয়াত দিলেন তার ক্লাবে। সেই থেকে শুরু। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে নিজেকে আর স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবে পরিচয় দেন না সুখন। কারণ হিসেবে বললেন, ‘স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হতে গেলে একজন মানুষের প্রচুর জ্ঞান থাকা লাগে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এখনো এটাকে কৌতুক মনে করে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি সেটা বোঝানোর; কিন্তু বলতে গেলে এককথায় বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি।’

 

সুখনের ভবিষ্যত
সোলায়মান সুখন মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাই নিজেকে মেলে ধরতে চান বিশ্বজুড়ে। এখন শুধু বাংলায় নিজের দেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বললেও ভবিষ্যতের ইংরেজিতে বিশ্বের সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চান। সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন সুখন। বলছিলেন, ‘আমি কখনো স্বপ্ন দেখে বসে থাকি না। সেই স্বপ্ন যতক্ষণ পূরণ না হয়, তার পেছনে লেগে থাকি- দৌড়ে বেড়াই।’ সোলায়মান সুখন যুক্ত ছিলেন মৃত ঘোষণার পর কেঁদে ওঠা শিশু গালিবাকে ঢাকায় এনে বাঁচিয়ে তোলার শেষ প্রচেষ্টায়। এছাড়া যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক কাজে। এভাবে নিজের সেরাটা দিয়ে তরুণদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে চান।

সেলফি তুলতে গিয়ে যতো দুর্ঘটনা

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বদলে গেছে আমাদের জীবনধারা। যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন অনুষঙ্গ। তবে সঠিক ব্যবহারের অভাবে ঘটছে দুর্ঘটনা। তার একটি অনুষঙ্গ সেলফি বা নিজে নিজে ছবি তোলা। বিষয়টি জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে ২০১৪ সাল থেকে। এখন এটি এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, এর জন্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করে না।

সারা বিশ্বেই সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে সেলফি তুলতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মারা গেছে প্রায় ৪৯ জন। এদের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী।

শিল্পকর্ম তছনছ

লস অ্যাঞ্জেলসের লিঙ্কন হেইটসের ফোরটিন্থ ফ্যাক্টরি গ্যালারিতে সেলফি তুলতে গিয়ে ২ লাখ ডলার মূল্যের শিল্পকর্ম তছনছ করে দিয়েছেন এক নারী! পাশাপাশি ৪টি সারিতে একটার পিছে আরেকটা করে অনেকগুলো ভাস্কর্য রাখা ছিল। ওগুলো রাখা হয়েছিল লম্বাটে বাক্সের ওপর। বাক্সগুলো মেঝেতে দাঁড়িয়ে আছে। ওই নারী একটা সারির প্রথম বাক্সের কাছে নিচু হয়ে দুই পায়ে ভর দিয়ে বসলেন। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে পারলেন না। ধাক্কা খেলেন বাক্সে। প্রথম বাক্সটা পড়ল দ্বিতীয়টির ওপর, দ্বিতীয়টি তৃতীয়টির ওপর, আর এভাবে সারির শেষ বাক্সটাও পড়ে গেল।

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

হেলিকপ্টারটি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে কক্সবাজারের ইনানিতে নামিয়ে দিয়েই ফেরার পথে পাইলটের কথা অমান্য করে নিহত শাহ আলমসহ অন্যরা হেলিকপ্টারের দরজা খুলে ছবি তুলছিল এবং ভিডিও করছিল। এসময় বাতাসের তারতম্যে ভারসাম্য হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টারটি।

সাপের ছোবল

গলায় বিষধর সাপ ঝুলিয়ে সেলফি তোলার ইচ্ছে হয়েছিল ভারতের ২৭ বছরের যুবক বিকাশ সিংহের। গ্রামের মন্দিরে সাপখেলা দেখাতে আসা সাপুড়েকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে একটি গোখরা জোগাড় করেছিলেন। মুঠোফোন দিয়ে সেলফি তোলার সময়ই বিকাশের হাতে ছোবল মারে সাপটি। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।

সাগরে ভেসে গেলো

সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিল তিন বান্ধবী। সেলফি তোলায় এতো মগ্ন ছিলো যে সাগরের দিকে আর খেয়ালই করেনি। হঠাৎ বড় এক ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তিন বান্ধবীর একজনকে।

নাগরদোলায় মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গায় সেলফি তুলতে গিয়ে নাগরদোলা থেকে পড়ে ইশতিয়াক আহমেদ রিদু নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। জেলা শহরের পুলিশ পার্কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

রেললাইনে মৃত্যু

রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে নিহত হয়েছে দুই ভারতীয় কিশোর। কিশোরদের একটি দল দিল্লির পূর্বে রেললাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের সামনে ছবি তোলার চেষ্টা করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

কুমিরের আক্রমণ

বরগুনার তালতলী উপজেলার ট্যাংড়াগিরি ইকোপার্কে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে এক দর্শনার্থী নিহত হয়েছেন। বিপজ্জনক স্থানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় একটি কুমির ওই দর্শনার্থীকে টেনে পুকুরে নিয়ে হত্যা করে।

পানিতে পড়ে মৃত্যু

ভারতের তেলেঙ্গানা প্রদেশের কুন্তল ঝরনায় সেলফি তুলতে গিয়ে পানিতে পড়ে গিয়ে ২ তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিজামাবাদের বাসিন্দা দুই তরুণের নাম আনসার ও ফাইজান।

নৌকাডুবি

সেলফি তুলতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে চার চিকিৎসকের। ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের সোলাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দশ চিকিৎসক ভিমা নদীতে নৌকায় ঘুরতে বের হন। এ সময় কয়েকজন সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। একসময় নৌকাটি একদিকে কাত হয়ে ডুবে যায়।

চলন্ত ট্রেনে মৃত্যু

চলন্ত ট্রেনে সেলফি তুলতে গিয়ে ভারতের কলকাতা শহরের হাওড়ার পূর্ব রেলের লিলুয়া স্টেশনে মৃত্যুর কোলে ধলে পড়ে চার বন্ধু। গুরুতর আহত হয়েছে একজন।

বন্দুকের গুলি

বন্দুক নিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে ৪৩ বছর বয়সি যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক পা্রণ হারিয়েছেন। ওয়াশিংটনের অধিবাসী ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। সেলফি তোলার আগে তিনি ভেবেছিলেন বন্দুকে গুলি নেই। কিন্তু বন্দুকে গুলি ভরা ছিল, সেটা প্রমাণিত হল তার প্রাণের বিনিময়ে।

৬০ ফুট নিচে

সেলফি তুলতে গিয়ে ৬০ ফুট নিচে পড়ে গেলো এক যুবতি। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। তবে তাঁর হাতের হাড় ভেঙে টুকরো হয়ে গিয়েছে।

গেম অব থ্রোনসের নতুন সিজন

টেলিভিশনের সিরিজ বা সিরিয়াল নিয়ে আমাদের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি-তর্ক রয়েছে। ভারতীয় সিরিয়ালের ক্ষেত্রে নারীরা আগ্রহী হলেও পুরুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তবে আজ স্টার ওয়ার্ল্ডের একটি ব্যতিক্রম সিরিজের কথা শুনবেন। সিরিজটির নতুন সিজনের খবর জানাচ্ছেন রেজুয়ার রহমান

‘গেম অব থ্রোনস’ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ। ৬টি সিজন শেষ করে গত জুলাই মাসে শুরু হয়েছে এই সিরিজের ৭ম সিজনের প্রচার। গেম অব থ্রোনসের অর্থ দাঁড়ায় ‘সিংহাসনের খেলা’। এই সিরিজের প্রতিটি পর্ব বানাতে প্রায় ১ কোটি ডলার করে খরচ হয়।

 

লম্বা সময় ধরে চলতে থাকা ইংরেজি সিরিজের সংখ্যা কম নয়। অনেক সিরিজ আছে যা ৫-১০ বছর ধরে প্রচারিত হতে থাকে। তবে অন্য সব টেলিভিশন সিরিজ থেকে এটির অবস্থান একটু উপরে। কারণ প্রত্যেকটি সিজনেই সমানতালে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা সিরিজের সংখ্যা হাতেগোনা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘গেম অব থ্রোনস’।

৭ম সিজন প্রচার শুরু হওয়ার পরও www.imdb.com এ টেলিভিশন সিরিজটির রেটিং ৯.৫/১০। যা বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ। ২০১১ সালে এই সিরিজের প্রথম সিজন প্রচার শুরু হয়।

 

সিরিয়ালের কাহিনি এগিয়েছে ৯টি রাজপরিবারের ক্ষমতা দখল ও টিকে থাকা নিয়ে। জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ বলতে গেলে পারিবারিক বন্ধন, প্রণয়, অবৈধ সম্পর্ক, রাজনীতি, খুন, অপরাধ, যুদ্ধ, অতিপ্রাকৃত ঘটনা ও সৃষ্টির চমৎকার মিশ্রণ রয়েছে সিরিয়ালটিতে। হাজার বছর, শত বছর ও কয়েক দশকের পুরনো ইতিহাস- এভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করে এই সিরিয়ালে তুলে ধরা হয়েছে, পৃথিবীর পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত কাল্পনিক রাজ্য ওয়েস্টেরসের গল্প।

সিরিয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক জর্জ রেমন্ড রিচার্ড মার্টিনের ‘এ সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার’ উপন্যাসের ওপর নির্ভর করে। এর নির্মাতা হচ্ছেন ডেভিড বেনিওফ এবং ডি বি ওয়াইস। এতে অভিনয় করেছেন পিটার ডিংকলেজ, লিনা হিডি, এমিলিয়া ক্লার্ক, কিট হেরিংটন, সোফি টার্নারের মতো জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী।

 

বর্তমানে শুধু টেলিভিশনের পর্দায় দেখার মধ্যেই সিরিয়ালটি সীমাবদ্ধ নয়, রীতিমত একটি ভাইরাল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে ‘গেম অব থ্রোনস’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আড্ডার আলোচনার মুখ্য বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে তরুণদের কাছে। শুধু নির্দিষ্ট কোন দেশ বা উপমহাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই সমানভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সিরিয়ালটি।

 

কাহিনির বিস্তারিত প্রদর্শন ও জীবন্ত গ্রাফিক্যাল অ্যানিমেশনের জন্য এর জনপ্রিয়তা এতো তুঙ্গে উঠেছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সিরিজটির শেষ সিজন প্রচার শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সিরিজটির নির্মাতাগণ।

টেলিভিশন চ্যানেল স্টার ওয়ার্ল্ডে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় প্রচারিত হয় এই সিরিয়ালটি।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পাবেন যেভাবে

রেল স্টেশনে গিয়ে টিকিট কাটার সময় বা সুযোগ হয় না অনেকেরই। গেলেও আবার কাউন্টারে প্রায়ই টিকিট থাকে না বা থাকলেও টিকিট কাটার মতো পরিস্থিতি থাকে না। বর্তমানে এতো ঝক্কি-ঝামেলার কোনো দরকার নেই। ট্রেনের টিকিট এখন নিতে পারেন অনলাইনেই। আসুন জেনে নেই অনলাইনে টিকিট পাওয়ার নিয়ম-

ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট esheba.cnsbd.com এ ঢুকতে হবে। ঢুকলেই একটি পেজে দুটি অপশন, একটি সাইন ইন, অন্যটি সাইন আপ। যাদের আইডি খোলা আছে তারা ই-মেইল, পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোড দিয়ে সাইন ইন করে আইডিতে ঢুকবেন। যাদের আইডি খোলা নেই, তারা আইডি খুলতে সাইন আপে ক্লিক করবেন।

আইডি খুলতে
সাইন আপে ক্লিক করলে একটি পেজে নিয়ে যাবে। এখানে প্যাসেঞ্জারের নাম, ই-মেইল আইডি, পাসওয়ার্ড, আপনার ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর চাইবে। এ পাসওয়ার্ড আপনি যে আইডি খুলছেন, তার পাসওয়ার্ড। আর যাত্রীর নাম দিতে সতর্ক থাকবেন। যার নাম দেওয়া হবে, তিনিই হবেন আইডির এবং টিকিটের মালিক। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হলো মোবাইল নম্বর। একটি নম্বর থেকে একটি আইডি খোলা যাবে। এই নম্বর সবসময় অনলাইন টিকিটের পিডিএফে শো করবে। এগুলো সব ফিলাপ করে রেজিস্ট্রার বাটনে ক্লিক করবেন।

ই-মেইল
ব্রাউজারে ই-মেইলের জন্য আরেকটি ট্যাব খুলুন। রেজিস্ট্রারে ক্লিক করলেই please check ur email for verification link লেখা আসবে। আপনার ই-মেইলে ঢুকে দেখবেন বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে একটি কনফারমেশন লিংকসহ মেইল এসেছে। লিংকে ক্লিক করুন। আবার রেলওয়ের পেজে চলে যাবে। ই-মেইল, রেলওয়ে আইডির পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোড দিয়ে সাইন ইন করুন। আরেকটি পেজে নিবে। শেষ ধাপ হিসেবে আপনার মোবাইল নম্বরে ভেরিফিকেশন কোড আসবে। যদি না আসে, তবে send verification code এ ক্লিক করবেন। আপনার নম্বরে একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে, সেটি এই পেজে লিখবেন। লিখে check verification code এ ক্লিক করবেন। এতে আপনি একটি আইডির মালিক হয়ে গেলেন।

 

সাইন ইন
এবার আপনার ই-মেইল, পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন আপনার আইডিতে। সাইন ইন করলেই পোস্টের পিকের মত আপনার ড্যাশবোর্ড আসবে। গত একমাসে আপনি কোন কোন টিকিট কাটতে পেরেছেন। কোন টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তা শো করবে। পাশাপাশি ড্যাশবোর্ডে থাকবে ফেয়ার কোয়েরি, ট্রেইন রুট, চেঞ্জ পাসওয়ার্ড এবং পারচেজ টিকিট অপশন। যেটা দরকার সেটাই ক্লিক করুন।

পাসওয়ার্ড চেঞ্জ
যদি আপনার কাছে আইডি ইনসিকিওর লাগে, তবে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চেঞ্জ পাসওয়ার্ড এ ক্লিক করবেন। এখানে আপনার পুরাতন পাসওয়ার্ড, নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে চেঞ্জ বাটনে ক্লিক করলেই চেঞ্জ হয়ে যাবে।

ফেয়ার কোয়েরি
আপনি যদি কোনো ট্রেনের টিকিট মূল্য জানতে চান, তাহলে ফেয়ার কোয়েরি বাটনে ক্লিক করুন। এখানে আপনি কত তারিখে ভ্রমণ করবেন, কোন স্টেশন থেকে ভ্রমণ শুরু করবেন, কোন স্টেশনে নামবেন, ট্রেনের নাম, কোন ক্লাসে ভ্রমণ করবেন, কতজন এডাল্ট, কতজন বাচ্চা সব সিলেক্ট করবেন। এরপর Show Fare বাটনে ক্লিক করলেই আপনাকে টিকিটের মূল্য ভ্যাট এবং সার্ভিস চার্জসহ বলে দেবে।

টিকিট কাটা
টিকিট কাটতে চাইলে Purchase Ticket অপশনে ক্লিক করুন। ক্লিক করলে একটি পেজে ঢুকবেন। সেখানে Station from এবং Station to সিলেক্ট করবেন। ভ্রমণের তারিখ সিলেক্ট করবেন। এবার ক্লাস বাটনে ক্লিক করবেন। আপনার যে ধরনের টিকিট দরকার, সেটা সিলেক্ট করবেন। সবশেষে search train বাটনে ক্লিক করবেন।

ট্রেন সিলেকশন
আপনি যে তারিখে যে রুটে সিলেকশন দিয়েছেন; সে রুটে এক বা একাধিক ট্রেন আছে। কোনটা কখন ছাড়বে সব দেখাবে এবার। এখন আপনি যে ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান সেটার অপশনে কতজন এডাল্ট, কতজন বাচ্চা এগুলো সিলেক্ট করবেন। সর্বোচ্চ চারজন সিলেক্ট করতে পারবেন। এডাল্ট এবং বাচ্চাসহ মোট ৪ জনের বেশির টিকিট আপনাকে দেওয়া হবে না।

 

সিলেকশন
এবার আসি টিকিট সিলেকশন। সিলেকশনে দুটি অপশন থাকবে- Auto Selection ও Seat Selection। যদি অটো সিলেকশন সিলেক্ট করেন, সার্ভার কম্পিউটার আপনাকে এভেইলএবল টিকিট থেকে যেকোনো সিট দিয়ে দেবে। কিন্তু সিট সিলেকশনে ক্লিক করলে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সিট সিলেক্ট করতে পারবেন।

সিট সিলেকশন
সিট সিলেকশনে ক্লিক করলে আপনাকে নির্ধারণ করা বগির বা বগিগুলোর সিট প্লান দেখাবে। যেসব সিট কালো দেখবেন সেগুলো কাউন্টারের জন্য। যেসব সিট লাল ও সবুজ সেগুলো অনলাইনের জন্য। লাল মানে অলরেডি সিট বিক্রি হয়ে গেছে, সবুজগুলো এখনও আপনি কিনতে পারবেন। এখান থেকে আপনার পছন্দমতো সিট বা সিটগুলো বাছাই করবেন। বাছাই করলে পাশের ছোট্ট ট্যাবে আপনার সিটগুলোর নম্বর, ভাড়া, ভ্যাট, সার্ভিস চার্জসহ মোট ভাড়া দেখাবে। এরপর আপনার লিঙ্গ (মেল বা ফিমেল), বয়স এগুলো সিলেক্ট বা ফিলাপ করবেন। অটো সিলেকশন করলে তারাই আপনাকে শো করবে কয়টি সিট আছে, ভাড়া কত? তবে কোন বগি কোন সিট এসব দেখাবে না। এরপর লিঙ্গ, বয়স সিলেক্ট করবেন। সিট সিলেকশন আপনি ভ্রমণের ১০ দিন আগে থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সময়ের মাঝে করতে পারবেন। ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে ভ্রমণের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সিট সিলেকশন অপশন থাকবে না। তখন আপনাকে অটো সিলেকশনে যেতে হবে।

কাটার সময়
টিকিট কেনার সময় সকাল আটটা থেকে রাত দশটা। রাত দশটার পর থেকে টিকেট কাটার ট্রাই করলে ব্যর্থ হবেন।

 

পেমেন্ট
পেমেন্ট করতে পারবেন ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস, ডিবিবিএল নেক্সাস, ডিবিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং থেকে। আপনি যেটা দিয়ে ভাড়া দিবেন, সেটাতে ক্লিক করবেন। একবার টিকিট কাটলে আগামী সাতদিন একই কার্ড থেকে টিকিট কাটতে পারবেন না। যদি কাটেন, তবে আপনার টাকা কেটে রেখে দেবে, কিন্তু কোন টিকিট দেবে না।

সাইন আউট
টিকিট কাটা হয়ে গেলে কম্পিউটার থেকে এবার সাইন আউট করে ফেলুন। এরপর ই-মেইলে ঢুকলে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে একটি মেইল আসবে। সাথে একটি পিডিএফ ফাইল থাকবে। এটাই আপনার টিকিটের পিডিএফ। এখানে ডাউনলোড প্রিন্ট আউট অপশন আছে। পছন্দমতো পিডিএফ ডাউনলোড বা প্রিন্ট আউট করুন। যদি কাউন্টার থেকে টিকিটের হার্ডকপি নিতে চান তবে, মোবাইল নম্বর এবং টিকিটের পিন নম্বর একটা কাগজে লিখে কাউন্টারে দিন, তারা আপনাকে টিকিট দেবে।

পিডিএফে ভ্রমণ
যার নামে আইডি খোলা হয়েছে, টিকিটেও তার নামই হবে। যদি সে ভ্রমণ করে, তাহলে শুধু পিডিএফের প্রিন্ট কপি নিয়েই ভ্রমণ করতে পারবে, কাউন্টার থেকে টিকিট তোলা লাগবে না। কিন্তু অন্য কেউ এই পিডিএফ দিয়ে ভ্রমণ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে তাকে কাউন্টার থেকে টিকিট তুলতে হবে।

মনে রাখবেন
অনলাইনে মাত্র ১০% টিকিট দেওয়া হয়। মোবাইলে দেওয়া হয় ১৫%। বাকি ৭৫% টিকিট দেওয়া হয় কাউন্টারে। সিট সিলেকশন দেওয়ার সময় যেসব সিট দেখছেন কালো, সিলেক্ট করা যায় না, সেগুলো কাউন্টারের টিকিট।

ত্রিনিত্রির মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল অন্বেষা

স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টায় কোনো অংশে পিছিয়ে নেই নারী। পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকে বেছে নিচ্ছেন অনলাইন মাধ্যম। অনলাইনে উদ্যোক্তাদের এই এগিয়ে চলা সবার কাছে সাড়া পাচ্ছে ২০১১ সাল থেকে। তেমনই এক উদ্যোক্তা সম্পর্কে জানাচ্ছেন ইফ্ফাত আরা মুনিয়া

 

বাসায় বসে অনেক নারী স্ব-স্ব প্রতিভায় এগিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের কাজ। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের ফ্যাশন ডিজাইনে নতুনত্ব এনে বাংলা সংস্কৃতির আবহমানতা বজায় রেখে নানা কারুকার্যে তৈরি করে যাচ্ছেন শাড়ি, গয়না, আংটি, ব্রেসলেটসহ নিত্যনতুন অলঙ্কার। শুধু সময় কাটানোর তাগিদেই নয়, অনেকটা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রেও অবদান রেখে চলেছেন।

 

তেমনই একজন অন্বেষা দত্ত। পড়ছেন ফার্মাসি নিয়ে। সামনে এম.ফার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দেবেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার নাম ‘ত্রিনিত্রি’। ত্রিনিত্রির শুরুটা কেমন ছিল জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি আঁকতে। আঁকাআঁকি মানসিক প্রশান্তি দেয় ভীষণ। বিশেষ করে, ফেলে দেওয়া জিনিসের রিসাইকেলিং করতে খুব ভালো লাগে। আর্ট আর ক্রাফটের প্রতি ভালোবাসাকে পুঁজি করে আমি একপ্রকার জেদ করেই ত্রিনিত্রির যাত্রা শুরু করি।’

 

শুরুর দিকের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে অন্বেষা বলেন, ‘যদিও এর যাত্রা পথটা খুব একটা অনুকূল ছিল না। আর্ট নিয়ে কিছু করার ব্যাপারে প্রথমে পরিবারের সমর্থন ছিল না মোটেও। তারা চাইতো আমি শুধু পড়াশোনায় মনোযোগ দেই। আর সবার মতো নিজের ক্যারিয়ার গড়ি!’

 

ত্রিনিত্রি প্রতিষ্ঠার পেছনে উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে ত্রিনিত্রি শুরু করার সময় আমি কারো অনুপ্রেরণা পাইনি। কেউ হয়তো ভাবেনি তখন, এ রকম উদ্যোগ নেওয়াটা ভালো কিছু। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে আমার নেশাকে পেশা বানানোর যাত্রা শুরু করি।’

 

এখন পরিবার কী ভাবছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অন্বেষা বলেন, ‘শুরুতে পরিবারের সমর্থন তেমন না পেলেও মা আর বাবা এখন অনেক উৎসাহ দেন। আর মা তো সব কেনাকাটার নিত্যসঙ্গী। পাশাপাশি বন্ধু কুমারজিৎও সহায়তা করে থাকে অনেকাংশে।’

 

ত্রিনিত্রিতে মূলত কোন কাঠের ওপর ফুটিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন গল্প, কাহিনি, অবয়ব। কাঠের গয়নাগুলো সবাই খুব পছন্দ করছে শুরু থেকেই। লোকজ, ট্রাইবাল কাজ ফুটিয়ে তোলা হয় কাঠের লকেট, আংটি এবং কানের দুলে। অন্বেষা বলেন, ‘শুরু থেকে সবাই এতো পছন্দ করে আসছে যে, কাঠের গয়না বানানো নেশার মতো হয়ে গেল। সাথে সাথে করলাম পোশাকের ওপর হ্যান্ডপেইন্ট। এছাড়া কাঠের পাশাপাশি জার্মান সিলভার আর দেশীয় কড়ি পুতি দিয়ে করা হয় গয়নাগাটি। এরমধ্যে কিছু কাঠের আংটি খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সেগুলোর মধ্যে নীল নয়নতারা, ফুলছবি, ফুলেল উল্লেখযোগ্য।’

 

ত্রিনিত্রি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান হবে। কাঠের গয়নাকে বাংলাদেশে এবং বাইরেও পরিচিতি দেওয়ার বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম করে তোলা হবে ত্রিনিত্রিকে। স্বপ্ন দেখি, একদিন ব্র্যান্ড হবে ত্রিনিত্রি আর সবাই একনামে চিনবে।’