মাঙ্কিপক্স নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব: ডব্লিউএইচও

ঢাকাঃ বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করা মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে এতে আরও মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এমন কিছুর জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এর পেছনে কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, যদিও রোগের এবারের প্রাদুর্ভাব খানিকটা অস্বাভাবিক। তারপরও বলা যায়, অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগ যেমন কভিডের মতো এটি সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।

এটি ছড়াতে খুবই ঘনিষ্ঠ শারীরিক স্পর্শের প্রয়োজন হয়। সাধারণত আক্রান্ত একজনের চামড়ার সঙ্গে অন্যজনের চামড়ার সংস্পর্শ থেকে এ রোগ ছড়ায়।

এছাড়া এটা কোভিডের মতো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃদু বা উপসর্গহীন নয়। বরং মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে শরীর খারাপ করবে এবং শরীরে ফোস্কার মতো গোটা দেখা দেবে। তাই কেউ এ রোগে আক্রান্ত কি-না, সেটা জানতে পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সরাসরি এই রোগের টিকা এখনও সহজলভ্য না হলেও গুটিবসন্তের টিকা দিয়ে এ ভাইরাস প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ দুই ভাইরাসের মধ্যে মিল রয়েছে।

এমনকী মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের জন্য সবার টিকা নেওয়াও প্রয়োজন নেই বলেও মত ডব্লিউএইচও বিশেষজ্ঞদের।

টিকার বিষয়ে ডা. রোসামুন্ড লুইস বলেন, বিশ্ব থেকে গুটিবসন্ত বিলুপ্ত হয়েছে। ওই সময়ে কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে গুটিবসন্তের টিকা মাক্সিপক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্যকর।

মাঙ্কিপক্সের টিকাও আছে। কিন্তু সেটা তুলনামূলক নতুন এবং সব জায়গায় পাওয়া যায় না। যদিও ডব্লিউএইচও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা টিকা আরও সহজলভ্য করতে কাজ করছেন।

তবে সবার জন্য টিকার প্রয়োজন নেই বলে মত ডব্লিউএইচও বিশেষজ্ঞ ডা. মারিয়া ফন কেরখোভের। তিনি বলেন, এ রোগ শুধু ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।

এর আগে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা (ইউকেএইচএসএ) এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদেরকে ২১ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে।

ইউকেএইচএসএ বলেছে যে, সমকামী এবং উভকামী পুরুষদের মধ্যে প্রাথমিক ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাতে শনাক্ত করা হয়েছে এবং বিশেষ করে এমন লোকদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডা. হপকিন্স বলেন, ‘যিনি নিয়মিত যৌন সঙ্গী পরিবর্তন করছেন বা কারো যৌনসঙ্গীর শরীরে ফুসকুড়ি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।’

এরই মধ্যে ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণ মোকাবিলায় ২১ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন বিধি জারি করেছে বেলজিয়াম। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবে, তাদের তিন সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

দেশে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম জারি করা হলেও বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বলেছে, তাদের দেশে মাঙ্কিপক্সের বৃহত্তর প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি কম।

‘মাঙ্কিপক্স’ মূলত গুটিবসন্ত বা চিকেনপক্স গোত্রেরই রোগ। তবে, এটি গুটিবসন্তের থেকে কম মারাত্মক, মৃত্যুর হার ৪ শতাংশেরও নিচে। বেশিরভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে। এর আগে কখনও আফ্রিকার বাইরে মহামারি আকারে এই রোগ ছড়াতে দেখা যায়নি।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভাইরাসে জনসাধারণের ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম।

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *