ঢাবি সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে ছাত্রীদের কমনরুম উদ্বোধন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১২তম তলা সম্প্রসারণের নির্মাণকাজ এবং এই ভবনে ছাত্রীদের কমনরুম উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার এ নির্মাণ কাজ ও ছাত্রীদের কমনরুম উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

এ উপলক্ষে সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। এ সময় অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ভবন সম্প্রসারণের অংশে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় ডিনকে ধন্যবাদ জানান।

নারীশিক্ষার প্রাচীন অবস্থার সঙ্গে সমসাময়িক বাস্তবতার তুলনা করে উপাচার্য বলেন, নারীরা বিভিন্ন সময়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং এই ধারা অব্যাহত রাখতে সত্য সুন্দরের দর্শনে জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঝে নারী জাগরণের বিভিন্ন বার্তা রয়েছে এবং এটি অনুপ্রেরণামূলক।

সত্যের জয় প্রসঙ্গে উপাচার্য সাম্প্রতিক ইউনেস্কো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্বীকৃতি প্রদানের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজও সকল মানুষকে অনুপ্রাণিত করে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ।

পরে অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কবিতা আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য ও সংগীত পরিবেশিত হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে।

রাজশাহীর তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, চবিসাসের নিন্দা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আদিব হাসানসহ রাজশাহীর তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।

রোববার চবিসাস সভাপতি আশহাবুর রহমান শোয়েব ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর হাসান স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।

তারা বলেন, গত ৯ নভেম্বর এসএ টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদন এবং ১০ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরে ‘রাবি ও রুয়েটে ইয়াবা ব্যবসায় ৪৪ শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারী’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ছিল যথেষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ ও বস্তুনিষ্ঠ। কিন্তু এরপরেও শুধুমাত্র সাংবাদিকদের হয়রানি এবং আইনের আশ্রয় নিয়ে সম্ভাব্য শাস্তি এড়াতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি মামলা করা হয়।

এছাড়া ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পদধারী দু’জন নেতার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত দুঃখজনক জানিয়ে তারা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক অধিশাখার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে একাডেমিক ও সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা না নেয়াতে আমরা হতবাক।

এ সময় তারা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। পাশাপাশি নিকৃষ্ট ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় এনে দেশকে মাদকমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানাচ্ছে চবিসাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নিয়ে নর্থ সাউথের বিতর্ক

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নিয়ে বিতর্ক তুলেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ)। এতে পুরনো তথ্য-উপাত্তসহ নানা ধরনের ক্রটি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও আনা হয়েছে। এ ধরনের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

রোববার এনএসইউর নিজস্ব ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাংকিংয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে র‌্যাংকিংয়ের কাজে বিভিন্ন সূচকে দেয়া নম্বর বিশ্লেষণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে থাকা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এনএসইউর তুলনা করা হয়।
বলা হয়, বাস্তবভিত্তিক তথ্যের বিভিন্ন মানদণ্ডে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নম্বর প্রদানে বৈষম্য করা হয়েছে। গবেষণায় ব্যবহƒত বাস্তবভিত্তিক তথ্য ২০১২ সালের। পুরানো এ তথ্যে ৬০ শতাংশ নম্বর দেয়া হয়েছে। অপরদিকে ধারণাগত দিকে ২০১৭ সালের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়েছে। এটা গবেষণার পদ্ধতিগত ভুল।

কেননা ২০১২ সালের তথ্যের সঙ্গে বর্তমানের কোনো মিলই নেই। গবেষণা কর্মে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিসংখ্যানবিদ ছিলেন না। যে কারণে গাণিতিক বিশ্লেষণে ভুল হয়েছে।

দুটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওআরজি কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড প্রায় একবছর ধরে র‌্যাংকিং তৈরির কাজ পরিচালনা করে। দেশের খ্যাতিমান এক শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের একটি উপদেষ্টা কমিটি গবেষণার সূচক নির্ধারণ করেন। সে আলোকে র‌্যাংকিং তালিকা গত ১০ নভেম্বর প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় বিবেচ্য সব ধরনের সূচক পূরণ করে এমন ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে র‌্যাংকিং করা হয়। সে অনুযায়ী র‌্যাংকিংয়ে প্রথমে স্থান পায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। দ্বিতীয় স্থানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। তৃতীয় স্থানে ইন্ডিপেনডেন্ট, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রয়েছে।

গবেষণায় ধারণাগত ও বাস্তবভিত্তিক নামে প্রধান দুটি সূচক ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে ধারণাগত স্কোরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি শীর্ষে অবস্থান করে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং তৃতীয় স্থানে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।

অপরদিকে বাস্তবভিত্তিক স্কোরে শীর্ষে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ডিপেনডেন্ট, তৃতীয় স্থানে নর্থ সাউথ। ধারণাগত স্কোরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি (এনএসইউ) অবশ্য কোনো আপত্তি জানায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাংকিংয়ের বিভিন্ন দিকের পর্যালোচনা তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্টাডিজ দফতরের পরিচালক অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, ডিন আবদুর রব খান, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক বেলাল আহমেদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য অধ্যাপক ইসলাম বলেন, আমরা এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাখান করছি না। এ ব্যাপারে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়ার ইচ্ছাও নেই। দেশে ভালো র‌্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে ওআরজি কোয়েস্ট যে গবেষণা করেছে সে জন্য অভিনন্দন জানাই। এতে ইতিবাচক প্রতিযোগিতার পথ সুগম হবে। কিন্তু যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তাতে ক্রটি আছে। বিভিন্ন সূচকে যে নম্বর প্রদান করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই এই র‌্যাংকিংয়ের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার অধিকার আমাদের আছে।

তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। তারা ভালো করলে আমরা অভিনন্দন জানাব। কারো পা কেটে আমরা লম্বা হতে চাই না। বরং আমার ক্রটি দূর করেই বড় হতে চাই।

জবিতে ভর্তি শুরু ২১ নভেম্বর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ ১ম বর্ষে ভর্তি ২১ নভেম্বর শুরু হবে।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে জবির ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ই’ ইউনিটে ১ম, ২য়, ৩য় ও চতুর্থ মেধাক্রম অনুযায়ী স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষে ভর্তির জন্য ‘শিওর ক্যাশ’ এর মাধ্যমে আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ বিভাগে টাকা এবং প্রয়োজনীয় সনদপত্রাদি জমা দিতে হবে।

একইভাবে ‘সি’ ইউনিটের বিবিএতে ভর্তির জন্য আগামী ২১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এবং ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তির জন্য আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ বিভাগে টাকা ও সনদপত্রাদি জমা দিতে হবে।

ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (jnu.ac.bd এবং admissionjnu.info) পাওয়া যাবে।

ইবিতে আসন প্রতি লড়াই ৩৯ জনের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শেষ হয়েছে। এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি আসনের বিপরীতে ৩৯ জন ভর্তিচ্ছু ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

এ বছর মোট ২২৭৫টি আসনের বিপরীতে ৮৭ হাজার ৩৮৮ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি সূত্রে আরও জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের অনলাইনে ভর্তির আবেদন গ্রহণ গত ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে গতকাল ১৯ নভেম্বর শেষ হয়।

ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া ইউনিট ভিত্তিক হিসেবে দেখা গেছে ‘এ’ ইউনিটে ২৪০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ২০৮২ জন।

‘এ’ ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে ৯ জন। ‘বি’ ইউনিটে ৪২০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৪ হাজার ৩৯৮ জন। ‘বি’ ইউনিটে একটি আসনের জন্য লড়বে ৩৬ জন ভর্তিচ্ছু।

‘সি’ ইউনিটে ৩৭৫টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৭ হাজার ৪৩৫জন। এই ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেবে ৪৭ জন শিক্ষার্থী। ‘ডি’ ইউনিটে ২৫০ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৬ হাজার ৬৪৬ জন। এই ইউনিটে প্রতি আসনের জন্য লড়বে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৭ জন শিক্ষার্থী।

‘ই’ ইউনিটে ২০০ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১২ হাজার ৯৬৬ জন। প্রতি আসনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেবেন এই ইউনিট থেকে।

‘এফ’ ইউনিটে ১০০ আসনের বিপরীতে ৩ হাজর ৭৫৯ জন আবেদন করেছেন। এই ইউনিটে একটি আসনের বিপরীতে ৩৮ জন পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

‘জি’ ইউনিটে ৪৫০ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৯ হাজার ১১৮ জন। এতে প্রতি আসনে লড়বে ২১ জন ভর্তিচ্ছু। ‘এইচ’ ইউনিটে ২৪০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১০ হাজার ৭৩১ জন ভর্তিচ্ছু। এইচ ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেবেন ৪৫ জন শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মাধ্য দিয়ে দেশসেরা মেধাবীদের ভর্তির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।

পুলিশ প্রশাসনকে শাবি কর্তৃপক্ষের কৃতজ্ঞতা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ায় ভর্তি কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবাবের সকল সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভুল বোঝাবুঝিকে পুঁজি করে কোনো মহল যাতে হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সজাগ রয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন দু-একটি সেন্টারে যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল তা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতা নিয়ে থাকে। তবে প্রচলিত বিধি অনুসারে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্র প্রধানকে অবহিত করে দায়িত্ব পালনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যথাযথভাবে পালন করা হলে এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে।

ভর্তি পরীক্ষার মূল কার্যপরিধির বাইরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুম মুনিরা নগরের মেজরটিলা আল আমীন ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গেলে কর্তব্যরত শিক্ষকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা এবং পুলিশ প্রশাসন সবাই সরকারের লোক। ভর্তি পরীক্ষায় সহযোগিতা করার জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেন।

কর দিয়ে দেশের উন্নয়নের একজন অংশীদার আমি

‘সরকার দেশের যে উন্নয়ন করছে, আমি প্রতিবছর আয়কর দিয়ে দেশের সেই উন্নয়নের একজন গর্বিত অংশীদার। এজন্য আমি গর্ববোধ করছি। আমি ২৭ বছর ধরে আয়কর দিচ্ছি। শুধু আমিই না, আমার পরিবারের সদস্যরাও আয়কর দেন। আমার স্ত্রী ৩২ বছর ধরে আয়কর দিচ্ছেন।’ কর দেওয়া প্রসঙ্গে এভাবেই কথাগুলো বললেন সাতক্ষীরা জেলার ‘কর বাহাদুর পরিবার’ এর খেতাব পাওয়া পরিবহন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক গোলাম রব্বানী।

বলাকা পরিবহনের মালিক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘করের আওতায় পড়েছে এমন সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কর দিলে দেশ এবং দেশের জনগণের উন্নতি অবধারিত। বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো একটি বড় প্রকল্প বিদেশি সহায়তা ছাড়াই প্রায় শেষ করে ফেলেছে। সরকার এটি করতে পারছে কারণ ব্যবসায়ীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর দিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সাতক্ষীরা জেলার কর বাহাদুর নির্বাচিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমি বহু বছর ধরে আয়কর দিয়ে আসছি। তার প্রতিদান পেয়ে আনন্দিত।’

এলাকায় অন্যদের কর দিতে উৎসাহিত করেছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘রাজস্ব হলো উন্নয়নের অক্সিজেন। আয়কর দেওয়া ব্যবসায়ীদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে মনে করি। আমি আমার আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার ব্যবসায়ীদের নিয়মিত কর দিতে উদ্বুদ্ধ করি।

 

গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নূরজাহান রব্বানী ৩২ বছর ধরে আয়কর দিচ্ছেন। রব্বানীর দম্পত্তির বড় ছেলে পরিবহন ব্যবসায়ী গোলাম আজম ও ঠিকাদার ছোট ছেলে গোলাম আকবর ১৪ বছর ধরে কর দিচ্ছে। আর মেয়ে জোবাইদা নাহার ১১ বছর ধরে কর দিচ্ছেন। বড় ছেলে ও একমাত্র মেয়ে দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। তিন সন্তানই ঢাকায় বসবাস করেন।

সাতক্ষীরা জেলা কর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৭ হাজার করদাতার মধ্যে গোলাম রব্বানি গত অর্থবছরে ৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮০ টাকা কর দিয়েছেন। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত ৯২ লাখ ৪২ হাজার ৯৬৭ টাকা আয়কর দিয়েছেন।

খুলনা সার্কেল-১৩ সাতক্ষীরা সহকারী কর কমিশনার শামসুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতি বছর করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর দিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এবছর সাতক্ষীরা জেলায় নতুন করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ হাজার ৭৭৪ জন। করের প্রতি ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ ই-সেন্টার ও পৌরসভার ই-সেন্টারের উদ্যোগতাদের ই-টিন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিজ্ঞ বানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ১৭ হাজার শিশু

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। এর মধ্যে  মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ১৭ হাজার শিশু। আর প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ৬ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আড়াই লাখের মতো শিশু। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। আর অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭ ভাগ, অর্থাৎ প্রায় ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।.

ইউনিসেফের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ফারিয়া সেলিম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে ১ লাখ ৭৬ হাজার শিশু। এসব শিশুকে ভিটামিন-এ খাওয়ানো হচ্ছে। একইসঙ্গে এসব শিশুকে নিউট্রিশন স্ক্যানিং করা হবে এবং ১ লাখ ১৮ হাজার শিশুকে ভিটামিন ডি-১ ক্যাপসুল দেওয়া হবে। উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংসহ সব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবখানে কাজ করছে ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য বিভাগ।’.

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ‘অপুষ্টিতে ভোগা রোহিঙ্গা শিশুরা যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মারা যাবে। অনেক রোহিঙ্গা শিশু এই ধরনের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। তাই পুষ্টি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৬ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫৬ জন শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি ১২ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী ১ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো হবে। এর মধ্যে যেসব বাচ্চা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের আলাদা করা হয়েছে এবং উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে।’.

গত সপ্তাহে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক সাংবাদিকদের বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার মধ্যে শিশুর সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার। এছাড়াও গর্ভবর্তী মায়েদের পাশাপাশি রয়েছে বয়স্ক রোগীও। এরমধ্যে ৩৬ হাজারেরও বেশি এতিম শিশু রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মানবিক সহায়তার পাশাপাশি  তাদের স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত করছে সরকার। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গাদের সুস্থ করে তুলতে নানা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।.

প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। এরপর থেকে এখনও সীমান্ত পেরিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে এসেছে ৬ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এসব শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষায় কলেরা, হাম ও রুবেলাসহ বিভিন্ন রোগের টিকাদানের পর এবার শুরু হয়েছে ‘নিউট্রিশন অ্যাকশন সপ্তাহ’।  ১৫ নভেম্বর থেকে এই কার্যক্রম চলছে। ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় সরকার এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

৫ শিক্ষার্থীর থিসিসে তথ্য চুরি ধরায় বাকৃবির অধ্যাপককে হেনস্তা ও অপসারণ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্ম স্ট্রাকচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভাগটিতে শিক্ষকদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। গত বছরের মাঝামাঝি পাঁচ শিক্ষার্থীর মাস্টার্সের গবেষণা প্রবন্ধে তথ্য চুরি ধরার পর থেকে এ অধ্যাপককে নিয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। ওই ঘটনার পর তাকে মেয়াদ শেষের আগেই বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় হল প্রধানের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় অধ্যাপক আনোয়ার ও বিভাগের শিক্ষকরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন।

অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, চলতি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় হল প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাকে। এর আগে ফার্ম স্ট্রাকচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মাস্টার্সের গবেষণা প্রবন্ধে অন্যের ডাটা ও তথ্য চুরি ধরার পর বিভাগের কয়েক শিক্ষকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে এক পর্যায়ে তাকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ড. আনোয়ারের।

চলতি বছরের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় হল প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন অধ্যাপক আনোয়ার। এছাড়া, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দু’দিন আগে গত ২ নভেম্বর এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র চক্রবর্তীকে চিঠি দেওয়া হয়। এটি দিয়েছেন কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক পরেশচন্দ্র মোদক ও কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বলে অভিযোগ আনোয়ার হোসেনের। তার দাবি, যারা থিসিস নকলকে প্রশ্রয় দিয়েছেন তাদের সঙ্গে উপাচার্যের লিয়াজোঁ আছে।

অধ্যাপক আনোয়ারকে পরীক্ষার হল প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির প্রতিবাদ জানানো দুই শিক্ষকের মধ্যে কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপক আনোয়ারকে এর আগে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তাকে সব ক্লাস থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ, তাকে ভর্তি পরীক্ষা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যতগুলো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এর পেছনে কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া, যে ভর্তি পরীক্ষায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা দায়িত্ব পান, সেখানে তাকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হলো। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে তার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হচ্ছে। এজন্যই আমি প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

অধ্যাপক আনোয়ার জানান, ২০১৬ সালের মে মাসের মাঝামাঝি বিভাগের সব ক্লাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অব্যাহতি দেয় তাকে। এছাড়া, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেনকে গত ২৪ মে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেন উপাচার্য আলী আকবর।

এ বিষয়ে জানতে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবরের মোবাইল ফোনে গত দু’দিন ধরে চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। কথা বলতে চেয়ে মেসেজ পাঠালেও উত্তর দেননি তিনি।

জানা যায়, স্ট্রাকচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অন্যের ডাটা ও তথ্য চুরি করে মাস্টার্সের গবেষণা প্রবন্ধ সম্পন্ন করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ধরে ফেলেন থিসিস পরীক্ষা কমিটির প্রধান ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আনোয়ার।

তার দাবি— ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ ও তাদের পাস না করিয়ে ফল প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিভাগের তিন শিক্ষক উল্টো তার ওপর চড়াও হন। এরপর ঘটনার তদন্ত না করেই তাকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব এমনকি সব ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া থেকেও অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধ থেকে হুবহু ডাটা ও তথ্য চুরি করেন ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ওই পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে রাজিয়া সুলতানা তার থিসিসের ১২টি স্থানে, মাহমুদুল হাসান ১৬টি, নাজমিন আরা ২৪টি, আলমগীর হোসেন ১৭টি ও সৌরভ ইসলাম ১৯টি স্থানে অন্যের ডাটা ও তথ্য হুবহু যুক্ত করে জমা দেন বিভাগে। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ওই গবেষণা প্রবন্ধের ওপর অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা।

প্রধান পরীক্ষক তাতে নম্বর বসিয়ে বিভাগে পাঠানোর পর সেগুলো নিরীক্ষা করেন অধ্যাপক আনোয়ারসহ বিভাগের গবেষণা প্রবন্ধের ডিফেন্স কমিটির বাকি তিন শিক্ষক। তিন পরীক্ষক অধ্যাপক আলী আশরাফ, অধ্যাপক নুরুল হক ও অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান প্রবন্ধগুলো নিরীক্ষণ করে নম্বর বসালেও এগুলোতে ডাটা চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন কমিটির প্রধান আনোয়ার হোসেন।

পরে ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর প্রবন্ধে কোনও নম্বর না দিয়ে তাদের অকৃতকার্য দেখিয়ে ফল প্রস্তুত করেন অধ্যাপক আনোয়ার। নিয়ম অনুযায়ী ওই নম্বরপত্রে স্বাক্ষর করার কথা ছিল বাকি তিন শিক্ষকের। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিতে অধ্যাপক আনোয়ারকে চাপ দেন ওই তিন শিক্ষক। অধ্যাপক আনোয়ারের অভিযোগ, এতে তিনি রাজি না হওয়ায় ওই তিন শিক্ষক তাকে গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় বিভাগকে জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. রকিবুল ইসলাম খান। তখন ড. আনোয়ারসহ কমিটি চার শিক্ষক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে যান। সবার সামনে ফল উন্মুক্ত করার পর সেখানেও রাজিয়া সুলতানাসহ বাকি চার শিক্ষার্থীর থিসিস নকলের বিষয়টি উল্লেখ করেন অধ্যাপক আনোয়ার। তার দাবি, সেখানে ফল সংশোধন করে নতুন টেবুলেশন শিট তৈরি করে তাতে স্বাক্ষরের জন্য চার ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয় তাকে।

ফল পরিবর্তনের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. রকিবুল ইসলাম খানও চাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এটা স্বীকার করেননি তিনি। বাংলা ট্রিবিউনকে ড. রকিবুল ইসলাম খান বলে, ‘টেবুলেশন শিটের যেখানে শিক্ষার্থীদের নম্বর লেখার কথা সেই স্থানে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন লাল কালিতে লিখে রেখেছেন ‘নকল থিসিস’। সবার উপস্থিতিতে তার নম্বর বাদ রেখে বাকি তিন শিক্ষকের দেওয়া নম্বর গড় করে ওই শিক্ষার্থীদের ফল দিতে চাইলে তিনি টেবুলেশন শিটে স্বাক্ষর করেননি। এখানে তাকে চাপাচাপি অথবা লাঞ্ছিত করা হয়নি।’

গবেষণা প্রবন্ধে অন্যের ডাটা ব্যবহারের পরও ওইসব শিক্ষার্থীদের কেন পাস করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল জানতে চাওয়া হয় অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের কাছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানার সুপারভাইজার শিক্ষক জায়েদা মঈন ও বাকি চার শিক্ষার্থীর কো-সুপারভাইজার ছিলেন থিসিস ডিফেন্স কমিটির বাকি শিক্ষকরা। গবেষণা প্রবন্ধে নকলের মতো একটি বড় অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছেন তারা। অপরাধ প্রমাণিত হলে ফেঁসে যাবেন– এই ভয়ে তারা যেভাবেই হোক ওই শিক্ষার্থীদের পাস করাতে চেয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ২৩ মার্চ ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ শিক্ষকদের অশালীন আচরণের ব্যাপারে অভিযোগ জানান অধ্যাপক আনোয়ার। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি।

উল্টো এর ১০ দিন পর ৩ এপ্রিল রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে ড. আনোয়ারকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার স্থানে দায়িত্ব পান কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের ডিন। পরদিন ৪ এপ্রিল নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ও ডিনের স্বাক্ষর দিয়ে ওই পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করে বিভাগ। কিন্তু প্রথমে তৈরি করা মূল ফলের টেবুলেশন শিট এখন পর্যন্ত নিজের কাছেই আছে বলে জানান অধ্যাপক আনোয়ার।

ফল প্রণয়ন সভায় আনোয়ার হোসেনের লাঞ্ছিত হওয়ার কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন বিভাগের অধ্যাপক আলী আশরাফ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক নুরুল হক অনেক প্রবীণ একজন শিক্ষক। অধ্যাপক আনোয়ার টেবুলেশন শিটে স্বাক্ষর না করায় ও অসংলগ্ন কথা বলায় নুরুল হক তার ওপর চড়াও হন এবং দুর্ব্যবহার করেন।’

শিক্ষার্থীদের থিসিসে ডাটা চুরির বিষয়ে অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ‘আমাদের চোখে ডাটা চুরির কোনও কিছু ধরা পড়েনি। তবে থিসিসের মান খুবই খারাপ ছিল। এটা ঠিক। এর মধ্যে রাজিয়া সুলতানার থিসিসের মান ছিল সবচেয়ে খারাপ।’

অথচ ৪ এপ্রিল ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, থিসিস নকল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজিয়া সুলতানাকে দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি নম্বর! তিনি সিজিপিএ-৩.৬০ পেয়েছেন। এছাড়া, মাহমুদুল হাসানকে ৩.২০, নাজমিন আরাকে ৩.৪৪ ও আলমগীর হোসেনকে দেওয়া হয় ৩.২৫। অন্য শিক্ষার্থী সৌরভ ইসলামের ফল জানা যায়নি।

থিসিসে অন্যের ডাটা ব্যবহারের পরও ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে অসহযোগিতা করেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।’

অন্যায় আচরণের অভিযোগ এনে ময়মনসিংহের নিম্ন আদালতে গত বছর একটি মামলা করেন অধ্যাপক আনোয়ার। সেখান থেকে মামলা তুলে নিয়ে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। এরপর তাকে অব্যাহতি দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না– জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। এতে চার সপ্তাহের মধ্যে বাকৃবির উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট ৯ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৮তম সিন্ডিকেট সভার বিষয়সূচির পরবর্তী রেকর্ড প্রতিবেদনে বলা হয়—অধ্যাপক আনোয়ারকে কোনও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া ছাড়াই বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া বিধিসম্মত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। ফলে এ নিয়ে এখন কোনও মন্তব্য করা যাচ্ছে না। কোর্টের বিষয় কোর্টের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হবে।’

তেঁতুলিয়ায় উঁকি দিচ্ছে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা

দুই মেরুর বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। আর সূর্যের সব রঙ-ই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে থাকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। প্রথমে টুকটুকে লাল, হঠাৎ সেই লাল পাল্টে হয়ে যায় কমলা রঙ, তারপর হলুদ, সবশেষে সাদা।

ইউটিউব, ফেসবুকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি বা ভিডিও দেখে দেখে যারা সেখানে যেতে না পারায় আফসোস করেন, তাদের জন্য আছে সুখবর। সেই সুখবরটা হলো, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আর সেই মায়াবী সৌন্দর্য দেখতে ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়ায় ভিড় জমিয়েছেন শত শত পর্যটক। চাইলে সেই দলে ভিড়ে যেতে পারেন আপনিও।

 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছর থেকে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখেই দেখা মিলছে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে শীতের মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষারশুভ্র হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরফশুভ্র হিমালয়ের গায়ে সূর্যের আলো পড়লেই তা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার নানান রূপ দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীন বা বাইনোকুলার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে না। দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে খালি চোখেই তা দেখা যাবে। মোহনীয় এ দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় ভিড় করতে শুরু করেছেন। কেউ একাকী, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে মনোমুগ্ধকর ওই দৃশ্য দর্শনে যাচ্ছেন।

 

নানা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। এছাড়া বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট (মানুষ পারাপার) চালু হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।

পঞ্চগড়ে গেলে কেবল হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘাই দেখা হবে না; একইসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সীমান্ত নদী মহানন্দায় সূর্যাস্তও দেখা যাবে। এছাড়া রয়েছে সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা সবুজের নৈসর্গ চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, জেমকন গ্রুপের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের আনন্দ ধারা, শিশুপার্ক, মোঘল আমলের স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বার আউলিয়ার মাজার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বদেশ্বরী মন্দির (সীতার ৫১ পীঠের এক পীঠ), পাথর সমৃদ্ধ রকস মিউজিয়াম, প্রাচীন ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নারসহ আরও অনেক কিছু। এখানকার ভুগর্ভস্থ ও নদী থেকে পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও যে কারোরই ভালো লাগবে।

 

পঞ্চগড় জেলা মোটর মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা এবং বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকা পর্যন্ত হানিফ, শ্যামলী বা নাবিল পরিবহনের এসি/ননএসি বাস চলাচল করছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে সৈয়দপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। সৈয়দপুর থেকে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেটকারে করে যাওয়া যাবে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় যাওয়া শিক্ষার্থী ফরহাদুজ্জামান শেখর বলেন, ‘শুনেছিলাম, তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে এখানে এসেছি। খালি চোখে হিমালয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ রূপ দেখেছি। আমি আজীবন এই দৃশ্য ভুলতে পারব না। তেঁতুলিয়া বেড়াতে আসা সার্থক হয়েছে।

 

রংপুর থেকে তেঁতুলিয়ায় বনভোজনে যাওয়া সীমা আখতার বলেন, ‘বনভোজনে এসে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাব, আশা করিনি। হিমালয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।’

 

আরিফ সৈকত নামে অন্য এক পর্যটক বলেন, ‘ঢাকা থেকে কষ্ট করে এখানে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখে আমি দারুণ খুশি। আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এককথায় অসাধারণ, যা বলার বাইরে।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম শাহিন জানান, তেঁতুলিয়ায় আবাসিক কোনও হোটেল না থাকায় জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে অনেক আগে নির্মিত ডাকবাংলো এবং অন্য পাশে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারে রাতযাপন করা যায়। কিন্তু অধিকাংশ সময় এ বাংলো দু’টি বুকিং থাকায় পর্যটকরা বেড়াতে এসে পড়েন বিপাকে। আগন্তুক পর্যটকদের রাতযাপনের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বুকিং না পাওয়ার কারণে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা সম্ভব হয় না। ফলে রাতযাপনের জন্য পর্যটকদের ফের ফিরে যেতে হয় পঞ্চগড় জেলা শহরের আবাসিক হোটেলে। পর্যটন মোটেল বা আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এখানে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। পর্যটক বাড়লে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি সৃষ্টি হবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মসংস্থানের। পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়া উপজেলার আগামী দিনে আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তিনি

 

তেঁতুলিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সানিউল ফেরদৌস জানান, তেঁতুলিয়া নামের কারণেই সর্বস্তরের মানুষের এখানে আসার আলাদা একটা আগ্রহ কাজ করে। বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকই এ পথ ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া নানা কারণে এখানে পর্যটকরা আসেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সীমিত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তা দিয়েই সব বয়সী মানুষদের জন্য অবকাশ যাপন কেন্দ্র, স্যানিটেশনসহ আকর্ষণীয় কিছু অবকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারা।