ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য!

হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের। পুড়ছে দেশটির বেশ কিছু অঙ্গরাজ্য। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা দাবানলের থাবায় সব পুড়ে ছাই। সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব ক্ষতিগ্রস্থ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা। এর মধ্যে সর্বাধিক বিপাকে হাওয়াই দ্বীপের মাউই কাউন্টিই অঙ্গরাজ্যটি। 

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের সামনে বনে যাচ্ছে সাধারন মানুষ। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা এবং বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। বলা হচ্ছে বিগত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক দাবানলের স্বাক্ষী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। 

ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এই দাবানলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৯৩ জনে। এখনও নিখোঁজ আছে শত শত মানুষ। ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে মাউই দ্বীপের ৮০ শতাংশের বেশি অঞ্চল। জানা গেছে, মাউইতে কমপক্ষে আরো দুটি দাবানল জ্বলছে। যদিও এখন পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। 

এরই সাথে ঐতিহাসিক লাহাইনা শহর পুরোপুরি পুড়ে এখন শুধু ছাই। লাহাইনার উত্তরে পশ্চিম মাউইএর উপকূলীয় এলাকা কানাপালিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুনের চতুর্থ দফা শুরু হয়। এক পর্যায়ে আগুন নেভানো গেলেও, ছাই ছাড়া কিছু বাকি নেই সেখানে। 

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে নিহতের সংখ্যা। আর তাই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে হাজার হাজার বাসিন্দাদের। 

জানা গেছে, এই দাবানল এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে ঘর বাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ ভবন ধ্বংস হয়েছে। এরই সাথে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। 

গত মঙ্গলবার ৮ই আগস্ট এই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিল। পরে হারিকেনডোরারপ্রভাবে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড বাতাসের কারণে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই দাবানলের ভয়াবহতা বিবেচনা করে গভর্নর জোস গ্রিন সূত্রপাতের দিনটিকেহৃদয়বিদারক দিনহিসেবে উল্লেখ করেছেন।

 ধ্বংযজ্ঞ চালানো এই দাবানলের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা কয়েকদিন ধরে হাওয়াইয়ে দমকা হাওয়া এবং শুষ্ক আবহাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে আসছিল। যা ধরনের আবহাওয়া একটি দাবানলের জন্য পূর্ব লক্ষন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স রোববার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে যত দাবানলের সূত্রপাত হয় তার ৮৫ শতাংশের জন্যই দায়ী থাকেন মানুষ। অপরদিকে প্রাকৃতিকভাবে মাঝে মাঝে দাবানলের সূত্রপাত হয়। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে রয়েছে বজ্রপাত আগ্নেয়গিরি।

এদিকে সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে, ইয়েল স্কুল অব এনভায়রনমেন্টের গবেষক এবং  বিজ্ঞানী জেনিফার লোপেজ জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রে।

তিনি বলেছেন, ‘হাওয়াইয়ে এত ভয়াবহ দাবানল, বিষয়টি শুনতেই অস্বাভাবিককারন এই অঙ্গরাজ্যটি একটি ভেজা এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্বাভাবিক বিষয় স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।

তার মতে, হাওয়াইয়ের দাবানল এত ভয়াবহ হয়েছে শক্তিশালী বাতাস এবং শুষ্ক পরিবেশের কারণে। দ্বীপটির ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে।

এদিকে মাউইএর বনবিভাগ জানিয়েছে, টানা এক সপ্তাহ ধরে চলা দাবানলের আগ্রাসনে বনাঞ্চলের শত শত একর বনভূমি পুড়ে গেছে। অনেক জায়গায় ছোট ছোট আকারে আগুন জ্বলছে। পরিস্থিতি এখনো বিপজ্জনক। পরিস্থিতি বিবেচনায়, সেখানকার বাসিন্দাদেরফায়ার জোনথেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে মাউই বনবিভাগের প্রধান ব্রাড ভেনচুরা।

এক শতাব্দী আগে, ১৯১৮ সালের ক্লোকেট শহরের আগুন খরাপীড়িত উত্তর মিনেসোটায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকটি গ্রামীণ সম্প্রদায়ের হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে শত শত লোক মারা যায়। সেই ধ্বংসলীলার ১০০ বছর পর এবার ভয়াবহ দাবানলের থাবায় পড়তে হয়েছে দেশটিকে।  

 

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *