লাইনে দাঁড়িয়ে আর টোল দিতে হবে না পদ্মা সেতুতে!

স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বাঙ্গালীদের কাছে যেন এক অনন্য সফলতা। আর এই সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য এসেছে সুখবর। কারন এখন আর লাইনে দাঁড়িয়ে টোল দিতে হবে না কোন যানবাহনের জন্য। এমন পরিকল্পনা গ্রহন করার কথা জানিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। 

প্রশ্ন আসতে পারে, তবে কি ফ্রিতে চলাচল করবে যানবাহন? নাকি রয়েছে বিকল্প কোন উপায়? সেই বিস্তারিত জানাতেই আমাদের আজকের প্রতিবেদন। 

বাংলাদেশ ডিজিটাল পথে হাঁটছে, গেল বেশ কিছু বছর ধরে। যেখানে গোটা বিশ্বের দেশগুলো প্রযুক্তিকে কাজে বিভিন্ন কাজ সহজ থেকে সহজত্বর করে তুলছে। সেইদিক থেকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।

পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। চালু হতে যাচ্ছে চলন্ত অবস্থায় গাড়ির টোল আদায় পদ্ধতিআরএফআইডি। অর্থাৎ, সহজ হচ্ছে পদ্মা সেতুর টোল দেওয়ার প্রক্রিয়া। 

নগদ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি চালু হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসিএস)  আর নতুন এই পদ্ধতির জন্যই সেতুর দুই পাড়ে থাকছে আলাদা বুথ। এছাড়াও প্রক্রিয়াধীন হাইব্রিডটাচ এন্ড গো পদ্ধতি।

নতুন দুই পদ্ধতি চালু হলে জটলামুক্ত থাকবে টোল প্লাজা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার হবে। চলুন জেনে নেই নতুন এই উদ্যোগের বিস্তারিত। 

এখন থেকে পদ্মা সেতুতে টোল দেওয়ার জন্য আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসেই চালু হচ্ছে কার্ড সিস্টেম। যাতে আগে থেকেই টাকা রিচার্জ করে রাখা যাবে। 

টোল প্লাজার কাছে পৌঁছালে রোবোটিক ক্যামেরা সেই গাড়িকে শনাক্ত করবে এবং কার্ড থেকে টোল কেটে নেবে। কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন এই কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। সব ধরনের টোল আদায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ তাদের।

জানা গেছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হলে একটি গাড়ি সর্বোচ্চ তিন সেকেন্ডে টোল দিতে পারবে। টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা কোরিয়ান কোম্পানি কেইসি জানিয়েছে, মাসেই চালু হবে নতুন প্রযুক্তি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এক্সপ্রেসওয়ে সেতুর টোলের জন্য এক কার্ড এক পেমেন্ট সিস্টেম চালু রয়েছে। এখন বাংলাদেশে সময় এসেছে পদ্ধতি চালুর। এতে একাধিক টোল কার্ড ব্যবহারের ভোগান্তি থেকে বাঁচবে গ্রাহকরা।

কেইসি প্রকল্প পরিচালক জিনউ পার্ক জানিয়েছেন, সেবা নিতে হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আরএফআইডি ট্যাগ থাকতে হবে। যার মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্ট দেওয়া যাবে। 

এদিকে পদ্মা সেতুর টোল আদায়ের জন্য আধুনিক ব্যবস্থার সবশেষ প্রস্তুতি দেখতে মাওয়ায় যান দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক। সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। 

তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশিদার হতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। দেশের অগ্রযাত্রায় আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আগে শুধু পোশাক শিল্পে অবদান রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া, এখন অবকাঠামো খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী আমরা।

টোলের কার্ড এবং রেজিস্ট্রেশনের জন্য পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে কাউন্টার থাকছে। এই কার্ড টোল মেশিনে ছোঁয়ালেই টাকা কেটে নেবে। 

ছাড়া গাড়িটি পদ্মা সেতু পার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টোল আদায় করে নেবে। সাথে সাথেই দেখা যাবে কার্ডের ব্যালেন্স।  

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সেতু চালু হওয়ায় দেশের ২১ জেলার যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি গড়ে উঠছে নতুন শিল্পকারখানা। ফলে প্রসার ঘটছে ব্যবসাবাণিজ্যের, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।এরই সাথে গত বছর উদ্বোধনের পর থেকে গড়ে প্রতিদিন সেতু থেকে কোটি ১৮ লাখ ২৯ হাজার ২৭০ টাকা টোল আদায় করা হয়ে থাকে। 

যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে!

জল্পনাকল্পনা শেষে এবং অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে অবশেষে উদ্বোধন হল দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেস। এরই মধ্য দিয়ে স্বস্তির মুখ দেখয়ার সুযোগ মিলেছে নগরবাসীর। 

২রা সেপ্টেম্বর, শনিবার এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতারা। 

বিকেল সাড়ে ৩টায় শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়েটির উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনের পর বিমানবন্দরফার্মগেট অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। 

এখন আর ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে না থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে এক্সপ্রেস ওয়ে ব্যবহার করে যেতে পারবেন গন্তব্যে। আর এই পুরো সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন বিমানবন্দর , কুড়িল, বনানী, মহাখালীতে, বিজয় ফার্মগেটে যাতায়াতকারী জনসাধারণ।

তবে আপাতত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে চালু হওয়ায় এখন থেকেই নগরবাসীর জন্য এই স্বস্তি বাড়ছে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১. কিলোমিটার অংশটি উদ্বোধন হয়েছে ইতিমধ্যে, যা শহরের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে বিকল্প রুট হিসাবে কাজ করবে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অংশটি চালু হলে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে ১০ মিনিটেরও কম সময় লাগবে, যা সাধারণত নিয়মিত রাস্তায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম চুক্তি সইয়ের এক যুগ পর আলোর মুখ দেখছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। 

এক্সপ্রেসওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিমানবন্দর এলাকায় দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে নামছে একটি র্যাম্প। 

এর মধ্যে বনানী মহাখালীর দুটি র্যাম্পের কাজ শেষ হয়নি। এজন্য আপাতত র্যাম্প দুটি বন্ধ থাকবে।

এদিকে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ দুটি এক্সপ্রেসওয়ের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে যানবাহন, বিশেষ করে ভারী যানবাহনের জন্য একটিভার্টিকাল বাইপাসতৈরি করা।

অর্থাৎ, ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েঢাকা ইপিজেড এলাকা থেকে আশুলিয়া আবদুল্লাহপুর হয়ে আসার পর বিমানবন্দর এলাকার কাছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হবে। 

২০ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েটিও ২০২৬ সালের জুনের সময়সীমা নিয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে। ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পাশাআপ্সহি বেধে দেয়া হয়েছে নিয়ম।

সেই অনুযায়ী, থ্রি হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীদের এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দেওয়া হবে না।একই সাথে মোটরবাইক এখনই চলতে পারবে না।

এর আগে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরফার্মগেট অংশের টোল রেট ৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে।

ক্যাটাগরি এর অধীনে যে কোনো স্থান থেকে বিমানবন্দরফার্মগেট অংশ অতিক্রম করার জন্য গাড়ি, ট্যাক্সি, জীপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল, মাইক্রোবাস (১৬ আসনের নিচে) এবং হালকা ট্রাক ( টনের নিচে) টোল রেট ৮০ টাকা।

মাঝারি ট্রাকের জন্য (ছয় চাকা পর্যন্ত) যে কোনো পয়েন্ট থেকে রুট পার হওয়ার জন্য টোল রেট ক্যাটাগরি এর অধীনে ৩২০ টাকা।

ক্যাটাগরি এর অধীনে যে কোনো পয়েন্ট থেকে রুট পার হওয়ার জন্য ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) টোল রেট ৪০০ টাকা। 

যে কোনো পয়েন্ট থেকে রুট পার হওয়ার জন্য যে কোনো বাসের (১৬ সিটের বা তার বেশি) টোল রেট ক্যাটাগরির অধীনে ১৬০ টাকা।

তবে স্বস্তির মুখ দেখার পাশাপাশি, জনসাধারনের মনে অন্য প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে, এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে যেমন স্বস্তির সুযোগ রয়েছে তেমনি নতুন ভোগান্তির কারন তৈরি হচ্ছে নাতো?

কারন প্রকল্পের শুরু থেকেই পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, শহরের মধ্যে নামার ্যাম্প বিশেষ করেবনানী, মহাখালী বিজয় সরণিতে গাড়ির চাপ তৈরি করবে।

পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবীব বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে রাস্তা ভাগ হচ্ছে, কিন্তু গাড়ির পরিমাণ সেই একই আছে। ঢাকায় যে গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে, সেগুলো সুবিধা পাবে। যে গাড়িগুলো নগরের বিভিন্ন ্যাম্পে নামবে, সেখানে তো আগে থেকেই গাড়ির একটা জট থাকবে। ফলে আরও জট হতে পারে।