বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২, সিলেটেই ৫১

ঢাকাঃ সারাদেশে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন নয়জন। এছাড়াও এই সময়ে নতুন করে পানিবাহিতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮৮ জন। বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যাসৃষ্ট দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এদের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে সিলেট বিভাগে।

শনিবার (২৫ জুন) বিকেলে সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের ১০ জেলায় এখন পর্যন্ত ৮২ জন মারা গেছে। সিলেট বিভাগেই ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুনামগঞ্জে ২৬ জন, মৌলভীবাজারে ৪ জন এবং হবিগঞ্জে ৩ জন মারা গেছেন।

ময়মনসিংহ বিভাগে বন্যাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ৫ জন, নেত্রকোণা জেলায় ৯ জন, জামালপুর জেলায় ৯ জন এবং শেরপুর জেলায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রংপুর বিভাগে এখন পর্যন্ত বন্যায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ৩ জন এবং লালমনিরহাটে ১ জন মারা গেছেন। তবে রংপুর বিভাগে কারো মৃত্যু হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বন্যায় সারাদেশে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ এখন পর্যন্ত বন্যায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ২০২ জনে দাঁড়িয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ১৭ মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৬৪ জন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরটিআই (চোখের রোগ) রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৬৬ জন, এ রোগে কারো মৃত্যু হয়নি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যাকবলিত এলাকায় বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন, তাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাপের দংশনে ছয় জন আক্রান্ত হয়েছেন, দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে পানিতে ডুবে মোট ৫৬ জনের মৃত্যু হয়।

চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৪ জন, চোখের প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ জন, নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন ৯৯ জন। এছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮৪০ জন, মারা গেছেন ৯ জন।

করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১২৮০

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩ জনের ‍মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৩৮ জনে।

এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৮০ জন। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৩ জনে। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।

শনিবার (২৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১০২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৫১৯ জন।

২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৪৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ৮ হাজার ৪৯২টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন, স্বপ্ন হল সত্যি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থিক, প্রকৌশল এবং রাজনৈতিক ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দীর্ঘতম সেতুটি উদ্ধোধন করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ আজ তার স্বপ্ন পূরণ প্রত্যক্ষ করছে।
শেখ হাসিনা রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং অন্যান্য অংশের সাথে সংযোগকারী খর¯্রােতা এবং জল প্রবাহ, দৈর্ঘ্য ও আকারের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বিবেচিত নদীর উপর এই সেতুটির উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে মাওয়া প্রান্তে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ফলক উম্মোচন করেন, যেখানে বিদেশী কূটনীতিকসহ হাজার হাজার বিশিষ্ট অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিম এবং অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগকারী যমুনা নদীর উপর ১৯৯৮ সালে এ যাবত কালের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালুর ২৫ বছর পরে তিনি আরো দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন।
তবে, দেশের নিজস্ব অর্থের ওপর নির্ভর করে সেতু তৈরির ব্যাপারে অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের সন্দেহকে বাতিল করে সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু অতিরিক্ত তাৎপর্য বহন করে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমরা অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি : সেতুমন্ত্রী

 আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমরা আমাদের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সক্ষমতার প্রতীক, এটা সত্য। তার চেয়েও বড় সত্য আমরা আমাদের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি।’
সেতুমন্ত্রী আজ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গোটা জাতি আজকে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) স্যালুট করে। সারা বিশ্বে আজকে আপনি প্রশংসিত। আপনি প্রমাণ করেছেন আমরাও পারি, আপনি বলেছেন, নিজের টাকায় করবো। প্রমাণ করেছেন নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করেছেন। মাথা নত করেননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। কী দুঃসময়, কঠিন সময় দেশে-বিদেশে সব চক্রান্ত উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরা বীরের জাতি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রী কেবল একা নন, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির কী অপরাধ ছিল। একটা পরিবারকে টার্গেট করে হেনস্তা করা হয়েছিল। একটা পরিবারকে অপমান করা হয়েছে। বাঙালি জাতিকে অপমান করা হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে। অপবাদ দিয়েছে দুর্নীতির। অনেককেই অপমান করা হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কাজ শুরু করা ছিল চ্যালেঞ্জের। এই সেতু নির্মাণে অন্য কারও কৃতিত্ব নেই, সব কৃতিত্ব একজনের। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সারা বাংলার দাবি ছিল শেখ হাসিনার নাম পদ্মা সেতুতে যুক্ত করতে। তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার মতো এমন কমিটেড মানুষ যদি না থাকতেন এমন সংকট, এত প্রতিবন্ধতা অতিক্রম করতে পারতাম না। যারা পদ্মা সেতুর নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা জানেন এখানে কাজ করা কঠিন ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যার ডাকে সাড়া দিয়ে পদ্মা পাড়ের অনেক মানুষ যারা তাদের বাপ-দাদার বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য একজনেরই কৃতিত্ব। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কেন পদ্মা সেতুর সঙ্গে তার নাম থাকবে না, সেটাই ছিল সবার দাবি। কিন্তু তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। কাগজের লেখা নাম ছিঁড়ে যাবে, ব্যানারে লেখা নাম ছিঁড়ে যাবে, পাথরে লেখা নাম মুছে যাবে, কিন্তু হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যাবে। যতদিন পদ্মা সেতু থাকবে সম্মানের সঙ্গে আপনার নামটি উচ্চারিত হবে।
এর আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শনিবার সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে পৌঁছান।

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত ২৬

চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের ৩৫ জন নতুন বাহক শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ সময় শহর ও গ্রামে কারো মৃত্যু হয়নি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জেলার করোনা সংক্রান্ত হালনাগাদ পরিস্থিতি সম্পর্কে আজকের প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডি ও নগরীর পাঁচ ল্যাবরেটরিতে গতকাল ৪৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন আক্রান্ত ২৬ জনের মধ্যে শহরের ২৫ ও সাতকানিয়া উপজেলার একজন। জেলায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯১৩ জনে। এর মধ্যে শহরের ৯২ হাজার ৩৬২ এবং গ্রামের ৩৪ হাজার ৫৫১ জন। গতকাল করোনায় শহর ও গ্রামের কোনো রোগি মারা যায়নি। ফলে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬২ জনই রয়েছে। এতে শহরের ৭৩৪ ও গ্রামের ৬২৮ জন।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, বেসরকারি এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতাল ল্যাবে গতকাল সবচেয়ে বেশি ২৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে শহরের ২ ও গ্রামের একজনের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ৭৫ জনের নমুনায় শহরের ১৭ জন আক্রান্ত বলে জানানো হয়।
বেসরকারি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ৪১টি নমুনা পরীক্ষায় শহরের ৩টিতে জীবাণু পাওয়া যায়। মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে ২২টি নমুনার মধ্যে শহরের একটিতেও জীবাণুর অস্তিত্ব শনাক্ত হয়নি। এপিক হেলথ কেয়ারে ৪৯ জনের নমুনায় শহরের ২ জনের পজিটিভ রেজাল্ট আসে। মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ল্যাবে ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে।
এদিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল, বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি শেভরন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, ল্যাব এইড, এভারকেয়ার হসপিটাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দর ল্যাবে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। নমুনা সংগ্রহের কোনো কেন্দ্রেই একজনেরও এন্টিজেন টেস্ট করা হয়নি। চট্টগ্রামের কোনো নমুনা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে পরীক্ষার জন্য যায়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে সংক্রমণ হার পাওয়া যায়, এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতাল ল্যাবে ০ দশমিক ৮১ শতাংশ, বিআইটিআইডি’তে ২২ দশমিক ৬৬, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ৭ দশমিক ৩১, এপিক হেলথ কেয়ার ৪ দশমিক ০৮, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ল্যাবে ৫ দশমিক ৮৮ এবং মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ০ শতাংশ।

জিডিপি বাড়াবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল বদলেই দেবে না, বদলে দেবে সেখানের অর্থনীতির গতি। সেতু ঘিরে অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন), পর্যটন, ইকোপার্কের পরিকল্পনা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে হিমায়িত মৎস্য ও পাটশিল্পের নতুন সম্ভাবনা। পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসার অপেক্ষায়। পদ্মা সেতুর কারণে দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরো সহজ হবে।

পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেতু বিভাগ বলেছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে। পদ্মা সেতুর মূল্যায়ন নিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এডিবি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জিডিপির একই প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়। এই সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে, যা সেতুটির ব্যয়ের প্রায় তিনগুণ বেশি।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের—খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া। বরিশাল বিভাগের—বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের—গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। এর বাইরে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর ও চুয়াডাঙাও সেতুর সুবিধার আওতায় চলে আসবে বলে মনে করছে সরকার।

দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাটশিল্প, যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু হলে এই আয় আরো বাড়বে। বড় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা খুলনায় রয়েছে। শহর থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৪২ কিলোমিটার। সড়কপথে পায়রা সমুদ্রবন্দরও বেশি দূরে নয়।

অর্থনৈতিক সুফলের পাশাপাশি আরো কিছু সামাজিক বিষয়ও আছে। বিনিয়োগের দিক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের সময় ও দূরত্ব। পদ্মা সেতু হলে ঢাকা থেকে দক্ষিণের জেলাগুলোয় যেতে বাসের ক্ষেত্রে গড়ে ২ ঘণ্টা ও ট্রাকের ক্ষেত্রে ১০ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় করবে।

পিরোজপুরের পেয়ারা, আমড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদিত শাকসবজি, মাছ, মুরগি, দুধ, ডিম এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। মহাসড়কের আশপাশে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী কলকারখানা করতে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যে জমি কিনে রেখেছে। পর্যটন খাতও অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় মানুষের আনাগোনা বাড়বে।

২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কয়েকটি সমীক্ষা হয়। সমীক্ষাগুলো করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং সেতু বিভাগের জন্য সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

এডিবির সমীক্ষায় দেখা যায়, উদ্বোধনের বছর সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করবে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন। তার মধ্যে বাস চলবে ৮ হাজার ২৩৮টি, ট্রাক ১০ হাজার ২৪৪টি, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার চলবে ৫ হাজারের বেশি।

পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়বে। ২০২৫ সালে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৮০০টি। ২০৩০ সালে হবে ৩৬ হাজার ৭৮৫, ২০৪০ সালে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ হাজার ৮০৭টি। ২০৫০ সালে প্রায় ৬৭ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে। এর সুফল পাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।

পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল যত বাড়বে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ততই বাড়বে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে লাভ কী হবে, তা নিয়ে ২০০৯ সালে আলাদা সমীক্ষা করে এডিবি ও জাইকা। এতে দেখা যায়, পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের অর্থনৈতিক প্রভাব বা ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন (ইআইআরআর) দাঁড়াবে বছরে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ।

আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ যানবাহন চলাচলের জন্য বহুল প্রত্যাশিত ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করবেন যা রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি বয়ে আনবে।
সেতুটির জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ করে যোগাযোগের সরাসরি সুবিধা লাভ করবে এমন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোসহ সারাদেশে একটি উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের বৃহত্তম স্ব-অর্থায়নকৃত মেগা প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির সময়সূচী অনুযায়ী মাওয়া পয়েন্টে সকাল ১১টায় তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শীট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ১.২ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে তিনি হেলিকপ্টারযোগে সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মাওয়া পয়েন্টে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
সকাল ১১টা ১২ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন।
তিনি সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন তিনি।
দুপুর ১২টায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত দলের জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মান কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়।
পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করেছে চীনের ঠিকাদার কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদী শাসন করেছে চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। মোট ৩০, ১৯৩৩.৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্ব-অর্থায়নে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
মূল সেতু নির্মাণের ব্যয় ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকা (৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার এবং গ্যাস লাইনের জন্য ১০০০ কোটি টাকা সহ) এবং ১৩.৮ কিলোমিটার নদী শাসন কাজের ব্যয় ৯,৪০০০.০ কোটি টাকা।
টোল প্লাজা এবং এসএ-২ সহ ১২ কিমি অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ ব্যয় ১,৯০৭.৬৮ কোটি টাকা (২টি টোল প্লাজা, ২টি থানা ভবন এবং ৩টি পরিষেবা এলাকা সহ) যেখানে পুনর্বাসনের ব্যয় ১,৫১৫.০০ কোটি টাকা, ২৬৯৩.২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় ১২৯০.৩ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি ৬৭৮৩.৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য (বেতন, পরিবহন, সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স, ফিজিক্যাল এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি, ইন্টারেস্ট ইত্যাদি) ১,৭৩১.১৭ টাকা।
শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পয়েন্টে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী নদী প্রশিক্ষণের কাজ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে তিনি জাপান সফর করেন। তিনি পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণে সম্মত হয়। যেহেতু পদ্মা নদী একটি শক্তিশালী নদী যার প্রবল স্রোত, জাপান পদ্মা নদী জরিপ শুরু করে এবং তারা তার অনুরোধে রূপসা নদীতে নির্মাণ কাজ শুরু করে।
জাপান ২০০১ সালে পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে জমা দেয়। জাপানি জরিপে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টকে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
জরিপের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত  জোট সরকার মাওয়া পয়েন্টে নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর জন্য আবারও জরিপ করার জন্য জাপান সরকারকে পরামর্শ দেয়।
দ্বিতীয়বার জরিপ করার পর জাপান মাওয়া পয়েন্টকে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
দায়িত্ব গ্রহণের ২২ তম দিনে, নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক পরামর্শদাতা সংস্থা মনসেল আইকমকে পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ নকশা প্রস্তুত করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
সেতু প্রকল্পে শুরুতে রেলের সুবিধা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলওয়ের সুবিধা রেখে সেতুর চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হয়।
ডিজাইনটি ২০১০ সালের মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে, ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সংশোধনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫ শ’ ৭ কোটি টাকা। খরচ বাড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। শুরুতে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার যা পরবর্তীতে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারে উন্নীত হয়।
প্রথম ডিপিপিতে, সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচে নৌযান চলাচলের জন্য জায়গা রেখে নকশা তৈরি করা হয়েছিল। পরে, ডিপিপি সংশোধন করার মাধ্যমে ৩৭টি স্প্যানের নীচে জাহাজ চলাচলের সুযোগ রাখা হয়।
সংশোধিত ডিপিপিতে অনেক ওজন বহন করার ক্ষমতাসম্পন্ন রেল সংযোগ যুক্ত করা হয়েছে। কংক্রিটের পরিবর্তে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত করা হয়।
সেতু নির্মাণের পাইলিং কাজের জন্যও অনেক গভীরে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসনের খরচও বেড়েছে (জমি অধিগ্রহণের কারণে)।
২০১৬ সালে খরচ বাড়ানো হলে মূল সেতু নির্মাণ ও নদী শাসনসহ সব কাজে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯ টাকা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১.৩ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ।
মূল সেতু নির্মাণ, নদী শাসন ও অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল তা প্রায় ৮ হাজার  কোটি টাকা বেড়েছে।
এছাড়া জমি অধিগ্রহণে খরচ বেড়েছে ও ফেরি ঘাট স্থানান্তরের জন্য খরচের প্রয়োজন হয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা মোতায়েন করা হয়।
পদ্মা বহুমুখী সেতু ব্যবহারের জন্য এরই মধ্যে টোল ঘোষণা করেছে সরকার। গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পার হতে একটি মোটরসাইকেল ১০০ টাকা, একটি গাড়ি ও একটি জীপ ৭৫০ টাকা।
টোল চার্ট অনুযায়ী, একটি পিকআপের জন্য ১,২০০ টাকা, একটি মাইক্রোবাসের জন্য ১,৩০০ টাকা, একটি ছোট বাসের জন্য (৩১-সিটের জন্য ১,৪০০ টাকা), একটি মাঝারি আকারের বাসের জন্য ২,০০০ টাকা (৩২ আসনের  বেশি) এবং একটি বড় বাসের জন্য (তিন-অ্যাক্সেল) ২,৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ছোট ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য ১,৬০০ টাকা, একটি মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন) জন্য ২,১০০ টাকা এবং ৮-১১ টন ওজনের একটি ট্রাকের জন্য ২,৮০০ টাকা, একটি ট্রাকের (থ্রি-অ্যাক্সেল) জন্য ৫,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং একটি ট্রেলারের (চার-অ্যাক্সেল) জন্য ৬,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয় যে চার-অ্যাক্সেল ট্রেলারের উপরে প্রতিটি এক্সেলের জন্য ৬,০০০ টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ১,০০০ টাকা যোগ করা হবে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ২৬ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ও কাঁঠালবাড়ি রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে বুধবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার।
পাশাপাশি, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, পোস্তগোলা ব্রিজ এবং রাজধানী ঢাকা ও পটুয়াখালী শহরের মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক এন-৮এই সময়ে বন্ধ থাকবে।
চলাচলের জন্য জনসাধারণকে বাবুবাজার সেতু ও এর আশপাশের সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

তিনি আজ সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি এই শ্রদ্ধা জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী এই মহান নেতার  স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পরে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁর দলের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেক দফা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং  তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

১৯৪৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিনত হয়।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে নাশকতা পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই : র‌্যাব ডিজি

আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে কোন নাশকতা বা হামলার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ও সাইবার মনিটরিংসহ অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবুও সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে র‌্যাব।

বুধবার দুপুরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব মহাপরিচালক আরো বলেন, নাশকতাসহ যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য র‌্যাব-এর প্রতিটি টিমের পেট্রেল জোড়দার করা হয়েছে। নিরাপত্তা তল্লাশী চলমান থাকবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে কোন ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

র‌্যাব ডিজি বলেন, সারাদেশের র‌্যাবের সাইবার টিম তৎপর রয়েছে। কেউ কোন ধরনের অপরাধ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিবে র‌্যাব। শুধু পদ্মা সেতু নয়, সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দেশবাসীকে স্বাচ্ছন্দে পদ্মা সেতুর অনুষ্ঠানে আসার আহবান জানান তিনি।

ঈদ উপলক্ষে দোকানপাট খোলা রাত ১০টা পর্যন্ত

ঢাকাঃ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান বন্ধের সময় রাত ৮টার পরিবর্তে ১০টা করেছে সরকার। তবে ১০ জুলাইয়ের পর আবার রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে দোকানপাট।

বুধবার (২২ জুন) বিকেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা-২০২২ উপলক্ষে জনসাধারণের সুবিধার্থে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এর ১১৪(৪) ধারার ক্ষমতাবলে একই আইনের ১১৪(৩) ধারায় বর্ণিত দোকান বন্ধের সময় সাময়িক পরিবর্তন করে রাত ৮টার পরিবর্তে রাত ১০টা করা হলো। আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ঈদ উপলক্ষে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার আবেদন জানানো হয়েছিল। শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার পর আজ প্রজ্ঞাপন জারি করল শ্রম মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত সোমবার (২০ জুন) থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট ও মুদি দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রোববার (১৯ জুন) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১১৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে প্রতিপালনপূর্বক সারাদেশে রাত আটটার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান, কাঁচা বাজার ইত্যাদি খোলা না রাখার বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

তবে জরুরি প্রয়োজনে রাত ৮টা পরেও খোলা যাখা যাবে কিছু প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রতিষ্ঠান হলো- ডক, জেটি, স্টেশন অথবা বিমান বন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস, প্রধানত তরি-তরকারি, মাংস, মাছ, দুগ্ধ জাতীয় সামগ্রী, রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি এবং ফুল বিক্রির দোকান, ঔষধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ অথবা চিকিৎসাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান, দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান, তামাক, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান এবং দোকানে বসে খাওয়ার জন্য নাশতা বিক্রির খুচরা দোকান, খুচরা পেট্রোল বিক্রির জন্য পেট্রোল পাম্প এবং মেরামত কারখানা নয় এমন মোটর গাড়ির সার্ভিস স্টেশন, নাপিত এবং কেশ প্রসাধনীর দোকান, যেকোনো ময়লা নিষ্কাশন অথবা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যেকোনো শিল্প, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি, আলো-অথবা পানি সরবরাহ করে। এছাড়াও ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা অথবা থিয়েটার।