মহানবিকে কটূক্তি : ভারতীয় পণ্য অপসারণ, মুসলিম বিশ্বের নিন্দা

মহানবি হজরত মোহাম্মদকে (স.) নিয়ে বিজেপির এক কর্মকর্তার কটূক্তির জেরে কুয়েতে সুপারমার্কেট থেকে সব ভারতীয় পণ্য অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান।

সোমবার আল-আরদিয়া কো-অপারেটিভ সোসাইটি সুপারশপের কর্মীরা কটূক্তির প্রতিবাদে ভারতীয় চা এবং অন্যান্য পণ্যগুলো সরিয়ে ফেলে।

সৌদি আরব, কাতার এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোসহ কায়রোর প্রভাবশালী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিজেপির একজন মুখপাত্রের বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে।
যদিও ইতোমধ্যে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

কুয়েত শহরে সুপার মার্কেটের বাইরে চালের বস্তা ফেলে রাখা হয় এবং মশলা ও মরিচের তাকগুলো প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয়।
এগুলোর ওপরে আরবিতে লেখা- ‘আমরা ভারতীয় পণ্য সরিয়ে দিয়েছি’।

দোকানের সিইও নাসের আল-মুতাইরি এএফপিকে বলেন, আমরা কুয়েতের মুসলিম জনগণ হিসেবে মহানবীকে অবমাননা মেনে নেব না।

ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র নুপুর শর্মার মন্তব্য মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
গত সপ্তাহে একটি টেলিভিশন বিতর্কে করা নুপুর শর্মার মন্তব্যকে উত্তরপ্রদেশে সংঘর্ষের জন্য দায়ী করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। তার মন্তব্যে মুসলিম দেশগুলোতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

রোববার (৫ জুন) নুপুর শর্মাকে ‘দলের অবস্থানের বিপরীতে মতামত’ প্রকাশের জন্য বরখাস্ত করেছে বিজেপি এবং দলটি জানায় তারা ‘সব ধর্মকে সম্মান করে’।

নুপুর শর্মা টুইটারে বলেন, মহানবি (স.) সম্পর্কে তার মন্তব্যগুলো তাদের দেবতা শিবের বিরুদ্ধে করা ‘অপমানসূচক’ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ছিল।

শাহজালাল বিমানবন্দরে আবার বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজে ধাক্কা

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবারও উড়োজাহাজে ধাক্কার ঘটনা ঘটেছে।
এবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজকে ধাক্কা দিয়েছে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনসের একটি গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট (জিএসই)।
বিমানের ওই উড়োজাহাজটি বসিয়ে (গ্রাউন্ডেড) রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিমান তদন্ত করছে।

বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
সে সময় বিমানের একটি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ বে এরিয়াতে অপেক্ষমাণ ছিল।
তখন ইউএস–বাংলার একটি জিএসই ডলি-ট্রলি (মালামাল নেওয়ার গাড়ি) বিমানের বোয়িং-৭৩৭ কে ধাক্কা দেয়। এতে উড়োজাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গ্রাউন্ডেড হয়। বিমানের এ উড়োজাহাজের পরদিন রোববার চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল।

বিমান জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ওই উড়োজাহাজ মেরামত করার বিষয়ে বোয়িং কোম্পানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষতির জন্য যে টাকা প্রয়োজন হবে, তা ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বহন করবে।

নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলবে

মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করার অভিযোগে দুদকের পাল্টা মামলা বাতিল চেয়ে সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে এই মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর ফলে তার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে মামলা চলতে বাধা নেই বলে বাসস’কে জানান ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
তিনি বলেন, আদালত বলেছেন আদালতের কোন রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ সমীচীন নয়। উচ্চ আদালতের মর্যাদা ক্ষুণœ হয় এমন কোন পদক্ষেপ কাম্য নয়।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে, সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করার অভিযোগে দুদকের পাল্টা মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন নাজমুল হুদা।

ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা উচ্চ আদালতে ডিসমিস করার পরও প্ররোচিত হয়ে মামলাটির রায় পরিবর্তন করা হয়। মামলাটি ডিসমিস করতে দুই কোটি টাকা ও অন্য একটি ব্যাংক গ্যারান্টির আড়াই কোটি টাকার অর্ধেক ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উৎকোচ চান বিচারপতি সিনহা। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য আসে দুদকে। দীর্ঘ দেড় বছর তদন্ত করে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে নাজমুল হুদার মামলাটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে দুদকে। আর মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে উল্টো ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধেই ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

অভিযোগে বলা হয়, আসামি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত না হয়ে বা মিথ্যা জেনেও আদালত ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য এবং তার নিজের বিরুদ্ধে থাকা ২০০৮ সালের মামলাটি প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন মানসে মিথ্যা ঘটনার সৃষ্টি করে শাহবাগ থানায় ওই মামলা করেছেন মর্মে দুদকের তদন্তে ওঠে আসে বলে জানান ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে অভিযুক্ত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক বেনজীর আহম্মেদ চার্জশিট দাখিল করেন। একই বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে পরবর্তী বিচারের জন্য বিশেষ জজ আদালত-৯ এ বদলির আদেশ দেন।

গত ৬ এপ্রিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।

অনাস্থা ভোটে জিতে গেলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দলীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের অনাস্থা ভোটে জিতে গেছেন। ফলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী তিনিই থাকছেন।
বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কি না, সে বিষয়ে সোমবার ভোট দেন তাঁর দল কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যরা। এতে বরিস জনসনের (৫৭) পক্ষে ২১১ ভোট এবং বিপক্ষে ১৪৮ ভোট পড়ে। যদিও জেতার জন্য জনসনের ১৮০ ভোটের প্রয়োজন ছিল। জয়ী না হলে দলীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ হারাতে হতো তাকে।
আস্থা ভোটে জিতে যাওয়ার পর জনসন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার হিসেবে আমরা এগিয়ে যেতে পারি এবং যে বিষয়গুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ সে সবের ওপর আলোকপাত করতে পারি।’
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিধিনিষিধ উপেক্ষা করে সরকারি বাসভবনে একাধিক পার্টির আয়োজন করেছিলেন বরিস জনসন। এতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমাও চাইতে হয় তাকে।
কারন করোনার বিধিনিষেধের সময় এমন আয়োজন নিষিদ্ধ ছিল। ‘পার্টিগেট কেলেঙ্কারি’ নামে পরিচিতি পাওয়া সেই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে কয়েক দফা তদন্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সু গ্রে দুই সপ্তাহ আগে ওই ঘটনার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে থেকেই বরিসের পদত্যাগ দাবি করে আসছিলেন অনেকে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে সেই দাবি জোরালো হয়।
কনজারভেটিভ পার্টির ‘১৯২২ কমিটি’ দলটির নেতৃত্ব নির্বাচনে কাজ করে থাকে। এই কমিটিতে দলটির ১৫ শতাংশ আইনপ্রণেতা যদি চিঠি দিয়ে দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন তবে তা অনাস্থা ভোটে গড়ায়। ওই কমিটি সোমবার বরিস জনসনের নেতৃত্বের ওপর এ অনাস্থা ভোটের আয়োজন করে।

৬০ ঘণ্টায়ও নেভেনি বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন

চট্টগ্রামঃ সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন এখনও জ্বলছে। ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুরোপুরি নির্বাপণ করা সম্ভব হয়নি। এর আগে শনিবার রাতে প্রথমে আগুন এরপর একের পর এক বিস্ফোরণ শুরু হয় ডিপোটিতে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার মঙ্গলবার সকালে বলেন, আমরা আগেই বলেছি আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু নির্বাপিত হয়নি। এখনও নয়টি ইউনিট কাজ করছে আমাদের। এর সাতটি সরাসরি অপারেশনে আছে। এখানে প্রচুর পরিমাণ কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ থাকায় কোনোভাবেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থেকেই ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত সংখ্যা ৪১ জন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে নয়জন ফায়ার সার্ভিস সদস্যও রয়েছেন। রোববার রাত পর্যন্ত নিহত সংখ্যা ৪৫ বলা হলেও সোমবার নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা ৪১ বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।

নিহতদের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। এসব মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১৬৩ জন। এর মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৬৯ জন হাসপাতাল ছেড়েছেন।

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ

আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়।

এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপোসহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি।

প্রতিবছরের মত এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কমূসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপি আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৮ টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে এদিন বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে বক্তব্য রাখবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ৬-দফা উত্থাপন করেন। এ নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ মার্চ ৬-দফা এবং এ ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেন।

৬-দফার মূল বক্তব্য ছিল, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু’টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপন। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ৬-দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেয়া হবে।

এদিকে, ৬-দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ৬-দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন। ফলে শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ৬ দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন।

ছয় দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়াছে যে তাদের দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ^াস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সাথে আছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতা-যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে-তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই।’
পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ৬-দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়।এ দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে।

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও  স্বৈরাচারী পাকিস্তানের শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে আবারো বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং সেই সময়ের ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ছয় দফা’কে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে। তারপরও যখন‘ছয় দফা’ আন্দোলন রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে চিরতরে তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলা দেন। সেদিন‘ছয় দফা’ দাবি আদায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে আমরা ছাত্ররা ’৬৯-এর জানুয়ারির ৪ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছয়-দফাকে এগারো দফায় অন্তর্ভূক্ত করে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে-কলে-কারখানায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা‘র (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ. আ. ম. স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, ৬ দফাই এনে দিয়েছে আমাদের তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূর দৃষ্টি, অন্তঃদৃষ্টি ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এতই প্রখর ছিল যে, তিনি ৬ দফাকে এক দফার দাবিতে পরিণত করে বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলনের ডাক দেন।