Breaking News
পঞ্চগড়ে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৫ ডিগ্রি, স্থবির জনজীবন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি | ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

হিমালয়ের কোলঘেঁষা দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ দ্রুত নিচে নামতে থাকায় জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে এ জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।


তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, এটিই আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ।

এর আগে গতকাল শুক্রবার একই সময়ে তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে অনেক বেশি।


সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ, যা অব্যাহত থাকছে পরদিন সকাল পর্যন্ত। কুয়াশা আর হাড়কাঁপানো শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। সকালে জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমিকদের অতিরিক্ত শীতবস্ত্র গায়ে জড়িয়েও কাজ করতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে, নিম্নআয়ের মানুষেরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে এবং মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যা: কর্মকর্তার স্ত্রীর কাণ্ডে তোলপাড়

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি | ২ ডিসেম্বর ২০২৫

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে সদ্যোজাত ৮টি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এই নৃশংস ও অমানবিক ঘটনায় শহরজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়।


স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ চত্বরের গেজেটেড ভবনের নিচে একটি মা কুকুর সম্প্রতি আটটি ছানা প্রসব করে। গত রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে ছানাগুলোকে আর দেখা যাচ্ছিল না। মা কুকুরটি সারা রাত ছানাগুলোর খোঁজে আর্তচিৎকার করে আবাসিক এলাকা ও অফিসার্স ক্লাবের সামনে ছোটাছুটি করে। স্থানীয়রা খাবার দিলেও সে মুখে নেয়নি।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের কেয়ারটেকার জাহাঙ্গির আলম জানান, সকালে তিনি ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের কাছে ছানাগুলোর বিষয়ে জানতে চান। তখন নয়ন কিছু জানেন না বললেও তার ছেলে জানায়, ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’

এই তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয়রা পুকুরে গিয়ে একটি মুখ বাঁধা বস্তা ভাসতে দেখেন। বস্তাটি তুলে আনার পর ভেতরে ৮টি কুকুর ছানার মৃতদেহ পাওয়া যায়।


এই নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি বেগমের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বামী হাসানুর রহমান নয়ন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত ও লজ্জিত। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”


মৃত ছানাগুলোর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারাও এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। ঈশ্বরদীর সাবেক ইউএনও সুবির কুমার দাশ ফেসবুকে লিখেছেন, “এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।” নেটিজেনরা অভিযুক্তকে ‘মানুষ নামের কলঙ্ক’ আখ্যা দিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।


ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর নড়েচড়ে বসেছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আকলিমা খাতুন বলেন, “এটি অত্যন্ত অমানবিক ও নিষ্ঠুর ঘটনা। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছি। এ ঘটনায় প্রাণী কল্যাণ আইনে মামলা করা যায় কি না, তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “উপজেলা পরিষদ চত্বরের মতো জায়গায় এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মাহত করার মতো। আমরা আজ (মঙ্গলবার) সকালে অফিসারদের নিয়ে জরুরি সভা করেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

 

 

মাত্র ১৩ ঘণ্টায় ৩ বার কাঁপল দেশ: নতুন করে আতঙ্কে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা | ২৭ নভেম্বর ২০২৫

মাত্র ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের তিন ভিন্ন প্রান্তে তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত এসব কম্পন অনুভূত হয়। যদিও রিখটার স্কেলে কম্পনগুলোর মাত্রা ছিল মৃদু থেকে মাঝারি, তবে গত সপ্তাহের ভয়াবহ ভূমিকম্পের স্মৃতির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

১৩ ঘণ্টায় ৩ কম্পনের বিবরণ:

 প্রথম কম্পন (টেকনাফ): বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ২৯ মিনিটে প্রথম কম্পনটি অনুভূত হয় কক্সবাজারের টেকনাফে। এর মাত্রা ছিল ৪.০। উৎপত্তিস্থল ছিল টেকনাফ থেকে ১১৮ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে।

 দ্বিতীয় কম্পন (সিলেট): এর ঠিক এক মিনিট পর, রাত ৩টা ৩০ মিনিটে দ্বিতীয় কম্পন অনুভূত হয় সিলেটে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩.৪। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মনিপুর রাজ্যে। গভীর রাতে হওয়ায় অনেকেই এটি টের পাননি।

 তৃতীয় কম্পন (ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা): সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় তৃতীয় কম্পনটি অনুভূত হয়। ইএমএসসি ও ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, এর মাত্রা ছিল ৩.৬ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশালে।


ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) ও স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজকের কম্পনগুলোতে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২১ নভেম্বর (শুক্রবার) ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল দেশ, যাতে ১০ জন নিহত ও ছয় শতাধিক মানুষ আহত হন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আজকের এই ঘনঘন কম্পন দেশবাসীকে নতুন করে শঙ্কিত করে তুলেছে।

আবারও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে এ কম্পন অনুভূত হয়। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) এ তথ্য জানিয়েছে।

 

 

 

সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ

হবিগঞ্জের মাধবপুর ইটাখোলা স্টেশন এলাকায় কালনী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার লিটন দে বলেন, প্রায় এক হাজার যাত্রী নিয়ে কালনী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়ে পড়ে। আখাউড়া থেকে একটি রিলিফ ট্রেন ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছে।

তিনি বলেন, সিলেটের সঙ্গে দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি।

তিনি আরও বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইঞ্জিন মেরামত বা পরিবর্তন করে রেল চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

 

চলতি মাসেই আরও ২০ বার কাঁপতে পারে বাংলাদেশ!’ বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তায় নতুন আতঙ্ক

গত দুদিনের টানা তিন দফা ভূমিকম্পের ধকল সামলে ওঠার আগেই নতুন করে আতঙ্কের খবর ছড়িয়েছে জনমনে। ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে যে, চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতে বাংলাদেশ আরও অন্তত ২০ বার ছোট-বড় মাত্রায় কেঁপে উঠতে পারে। মূলত বড় ভূমিকম্পের পরবর্তী ‘আফটার শক’ বা অনুকম্পনের ঝুঁকি থেকেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) নরসিংদীর মাধবদীতে যে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তার উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে (শ্যালো ফোকাস)। ভূ-তাত্ত্বিক নিয়ম অনুযায়ী, মাটির অগভীর স্তরে বড় ধরনের শক্তি নির্গত হলে প্লেটগুলো স্থির হতে সময় নেয়। এই সময় ছোট ছোট অনেকগুলো কম্পন বা ‘আফটার শক’ সৃষ্টি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক এক অধ্যাপক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, “বড় ভূমিকম্পের পর প্লেট বাউণ্ডারিতে ভারসাম্য ফিরে আসতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ সময়ে রিখটার স্কেলে ৩ থেকে ৪ মাত্রার বা তার চেয়ে কম মাত্রার কম্পন বহুবার হতে পারে। সংখ্যাটি ১০, ২০ বা তার বেশিও হতে পারে। তবে এর সবগুলো মানুষ অনুভব নাও করতে পারে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘২০ বার ভূমিকম্প হবে’—এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ভীতি তৈরি হয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বা দিনক্ষণ আগে থেকে বলা বিজ্ঞানের অসাধ্য।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বলেন, “শুক্রবার ও শনিবারের ঘটনার পর টেকটনিক প্লেটগুলো অস্থির অবস্থায় আছে। তাই ঘন ঘন মৃদু কম্পন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে ‘২০ বার কাঁপবে’—এমন সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলাটা ঠিক নয়। এটি মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ আফটার শক যেকোনো সময় হতে পারে।”

পরপর ভূমিকম্প এবং নতুন এই সতর্কবার্তায় ঢাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার বহুতল ভবন ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। রাতে সামান্য শব্দ হলেই মানুষ রাস্তায় নেমে আসছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ সবাইকে গুজবে কান না দিয়ে সতর্ক থাকার এবং ভূমিকম্প চলাকালীন করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংখ্যা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো এড়িয়ে চলা এবং জরুরি অবস্থায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি রাখাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

ঢাকা সন্ধ্যায় আবারও ভূমিকম্পে কাঁপল

আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ। ঘড়ির কাটায় ঠিক ৬টার পরপরই এই কম্পন অনুভূত হয়। এ নিয়ে গত ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভব করল দেশবাসী।


শনিবার সন্ধ্যার ৬টার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই কম্পন অনুভূত হয়। কম্পনটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। অফিস-আদালত ছুটি হলেও সন্ধ্যাবেলায় বাসায় থাকা মানুষ এবং শপিং মল ও বাজারে অবস্থানরতদের মধ্যে এই কম্পনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেককে বহুতল ভবন থেকে দ্রুত নিচে নেমে রাস্তায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে এই ভূমিকম্পের মাত্রা বা উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর বা ইউএসজিএস (USGS) থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। 


এর আগে আজ শনিবার সকালেই (১০টা ৩৬ মিনিটে) ৩.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, যার উৎপত্তিস্থল ছিল সাভারের বাইপাইল। তারও আগে গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপেছিল পুরো দেশ, যাতে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।

পরপর দুদিনে তিনবার ভূমিকম্পের ঘটনায় জনমনে চরম অস্থিরতা ও ভীতি কাজ করছে। বিশেষ করে ঢাকার বাসিন্দারা বড় কোনো বিপর্যয়ের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করছেন। ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

 

 

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বহুতল ভবনে আগুন, ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে

রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি বহুতল আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের তৎপরতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ভবনটি। শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরের দিকে এই আগুনের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে সেগুনবাগিচার ওই বহুতল ভবনের একটি তলা থেকে হঠাৎ ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দ্রুত ভবন থেকে নিচে নেমে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।

আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুনের তীব্রতা ও বহুতল ভবন হওয়ায় ঝুঁকি বিবেচনায় পরে আরও তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের মোট ৫টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার জানান, অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুনে ফ্ল্যাটের কিছু আসবাবপত্র পুড়ে গেলেও ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে আগুন অন্য ফ্লোরে ছড়াতে পারেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ভূমিকম্পে নিহত বাবা-ছেলের দাফন সম্পন্ন, লক্ষ্মীপুরে স্বজনদের আহাজারি

পুরান ঢাকায় ভূমিকম্পের সময় ভবনের রেলিং ধসে নিহত আবদুর রহিম (৫৫) ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলে হাফেজ আবদুল আজিজ রিমনের (১৩) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে তাদের নিজ গ্রাম লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও ছেলেকে পাশাপাশি দাফন করা হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শনিবার ভোররাতে ঢাকা থেকে আবদুর রহিম ও রিমনের মরদেহ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ নামানোর সময় স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সকাল ৯টায় স্থানীয় বশিকপুর আস-সুন্নাহ মাদ্রাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্স মাঠে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও এলাকাবাসীসহ হাজারো মানুষ জানাজায় অংশ নেন।

নিহত আবদুর রহিম দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় বসবাস করতেন এবং সেখানেই ব্যবসা পরিচালনা করতেন। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে তিনি ছেলে রিমনকে সঙ্গে নিয়ে বংশালের কসাইটুলি এলাকায় বাজার করতে যান। ঠিক সেই সময় শক্তিশালী ভূমিকম্পে পাশের একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে তাদের ওপর পড়ে।
ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাবা আবদুর রহিম। গুরুতর আহত অবস্থায় ছেলে রিমনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সী রিমন পবিত্র কুরআনের হাফেজ ছিলেন। ফুটফুটে এই কিশোরের অকাল মৃত্যুতে এলাকাবাসী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

বাবা-ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী। বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, “জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকা মানুষগুলোর এমন মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। বাবা ও ছেলের লাশ একসাথে দাফন করার দৃশ্য আমাদের সবার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
শুক্রবারের ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও, একই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ও কনিষ্ঠ সন্তানের মৃত্যু লক্ষ্মীপুরের এই জনপদকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

ভূমিকম্পের আঘাতে মেট্রোরেলের ৬ স্টেশনে ফাটল, কর্তৃপক্ষের দাবি ‘গুরুতর নয়’

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। এর প্রভাবে ঢাকার আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা মেট্রোরেলের অবকাঠামোতেও আঘাত লেগেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, পল্লবী, মিরপুর ১০, মিরপুর ১১ ও ফার্মগেট—এই ছয়টি স্টেশনের দেয়াল, ফ্লোর ও টাইলসে ফাটল দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে দেখা যায় ভূমিকম্পের ক্ষত।
কারওয়ান বাজার ও বিজয় সরণি: এই দুই স্টেশনের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন কক্ষের ফ্লোরে ফাটল ধরেছে। বিজয় সরণির সাব-স্টেশন কক্ষের প্রবেশদ্বারের দেয়ালেও ফাটল দৃশ্যমান।
পল্লবী: বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন কক্ষ এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (কন্ট্রোল রুম) ভেতরে ফাটল দেখা গেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এক কোণের দেয়ালে স্পষ্ট ফাটল রয়েছে।
মিরপুর ১১: বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের ফ্লোরে ফাটল তৈরি হয়েছে।
মিরপুর ১০: স্টেশনের ভেতরের কয়েকটি টাইলসে ফাটল ধরেছে।
ফার্মগেট: লিফট কোরের ভেতরের দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে।

ফাটলের বিষয়ে পল্লবী স্টেশনের কন্ট্রোলার মো. সায়েম প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরে বলেন, “আগেও ফেটে থাকতে পারে, আবার ভূমিকম্পেও ফাটতে পারে। আমি জানি না—এখনই প্রথম দেখলাম।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, ভূমিকম্পে আরও একটি স্থানে ফাটল ধরেছে।
কারওয়ান বাজার স্টেশনে সন্ধ্যায় সাব-স্টেশন কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানকার এক কর্মী জানান, ফাটল দেখা দেওয়ায় কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভূমিকম্পের পরপরই মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হলেও শুক্রবার বিকেল থেকে তা স্বাভাবিক হয়। ফাটলের বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিষয়টিকে ‘গুরুতর নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “ফাটল দেখেছি। এগুলো অবকাঠামোগত বা গুরুতর কোনো সমস্যা নয়। আমরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।”
ঝুঁকি নিয়ে মেট্রোরেল চালু রাখার প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা একাধিক ট্রায়াল রান করেছি। যখন দেখেছি বড় কোনো সমস্যা নেই, তখনই যাত্রী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করেছি।”

এত বড় মাত্রার ভূমিকম্পের পর গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় ফাটল দেখা দেওয়ায় যাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।