ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যা: কর্মকর্তার স্ত্রীর কাণ্ডে তোলপাড়
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি | ২ ডিসেম্বর ২০২৫
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে সদ্যোজাত ৮টি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এই নৃশংস ও অমানবিক ঘটনায় শহরজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ চত্বরের গেজেটেড ভবনের নিচে একটি মা কুকুর সম্প্রতি আটটি ছানা প্রসব করে। গত রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে ছানাগুলোকে আর দেখা যাচ্ছিল না। মা কুকুরটি সারা রাত ছানাগুলোর খোঁজে আর্তচিৎকার করে আবাসিক এলাকা ও অফিসার্স ক্লাবের সামনে ছোটাছুটি করে। স্থানীয়রা খাবার দিলেও সে মুখে নেয়নি।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের কেয়ারটেকার জাহাঙ্গির আলম জানান, সকালে তিনি ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের কাছে ছানাগুলোর বিষয়ে জানতে চান। তখন নয়ন কিছু জানেন না বললেও তার ছেলে জানায়, ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’
এই তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয়রা পুকুরে গিয়ে একটি মুখ বাঁধা বস্তা ভাসতে দেখেন। বস্তাটি তুলে আনার পর ভেতরে ৮টি কুকুর ছানার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এই নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি বেগমের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বামী হাসানুর রহমান নয়ন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত ও লজ্জিত। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
মৃত ছানাগুলোর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারাও এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। ঈশ্বরদীর সাবেক ইউএনও সুবির কুমার দাশ ফেসবুকে লিখেছেন, “এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।” নেটিজেনরা অভিযুক্তকে ‘মানুষ নামের কলঙ্ক’ আখ্যা দিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর নড়েচড়ে বসেছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আকলিমা খাতুন বলেন, “এটি অত্যন্ত অমানবিক ও নিষ্ঠুর ঘটনা। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছি। এ ঘটনায় প্রাণী কল্যাণ আইনে মামলা করা যায় কি না, তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “উপজেলা পরিষদ চত্বরের মতো জায়গায় এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মাহত করার মতো। আমরা আজ (মঙ্গলবার) সকালে অফিসারদের নিয়ে জরুরি সভা করেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

