প্রলয়

উড়ছে নীল মেঘ। পার্কের দূর্বা ঘাসগুলো বাতাসে দুলছে। স্নিগ্ধ বাতাসে ছুঁয়ে যাচ্ছে মন। বিরক্তির চোখে ‘অর্পিতা’ বারবার দেখছে ঘড়ি। বেলা ৬টা বাজে, কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আমাকে বাসায় যাবার জন্য দৌঁড়াতে হবে। নইলে আন্টি আমাকে বাসায় ঢুকতেই দিবেনা। ওহ, কেন যে প্রলয় এখনো আসছেনা। এতো দেরি করলে আমায় বাসায় ফিরবো কখন।

পার্কের লেকের পাড়ে বসে আছে অর্পিতা। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন তার ঘন কালো চুলে বুলাতে লাগল মমতার স্পর্শ।
অর্পিতা- খবরদার তুমি আমার চুল স্পর্শ করবে না। এতো দেরি করে কেন আসলা? তুমি জানোনা, আন্টি আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করে।

অর্পিতাকে বিয়ে দিতে চায় তার আন্টি (সৎ মা)। সৎমায়ের সাথে অর্পিতার বাবাও রাজি হন। এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাথে ঠিক হয় বিয়ে। প্রলয় দায়িত্ব নিতে চায় না

দুই হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলো প্রলয়। প্রলয়ের জোড়া হাতের কাছে হার মানল অর্পিতার অভিমান।
অর্পিতা- তুমি এতো দেরি করলে কেন?
প্রলয়- বিসিএস পরীক্ষার জন্য টাকা জমা দিতে গেছিলাম।
– কত টাকা লাগবে?
– ত্রিশ হাজার।
– সরকারী পরীক্ষা দিতে কি ত্রিশ হাজার টাকা লাগে।
– তুমিতো জানোনা, এখন সব কিছুর খরচ বেড়ে গেছে। একেকবার একেক সরকার আসে। আর নূতন নূতন খরচ বাড়ায়। তুমি কি চাওনা যে, আমি বিসিএস ক্যাডার হই?
– অবশ্যই চাই। আমি জাানি তোমার টাকার সমস্যা। তাই আমার হীরার এই নাম ফুলটা এনেছি। মারা যাবার আগে আম্মা আমাকে এটা দিয়েছিল।
– তুমি আমাকে এত দুর্লভ স্মৃতির জিনিসটা দিয়ে দিলা। তোমার কষ্ট হবে না।
– তুমি ভালো একটা চাকরি পেলে তো, আমারই সুবিধা। তাড়াতাড়ি আমরা জীবন শুরু করবো। মায়ের শেষ স্মৃতির থেকে আমার কাছে তোমার প্রতিষ্ঠা অনেক বেশি জরুরি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
প্রলয়ের নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগলো। অর্পিতা মায়ের শেষ স্মৃতিটা পর্যন্ত তাকে দিয়ে দিচ্ছে। অথচ সে নানা ভাবে মিথ্যা বলে অর্পিতার কাছে টাকা নেয়। কিন্তু কি করবে প্রলয়? তার যে উপায় নাই।
প্রলয়- অর্পিতা তুমি যদি জানতে পারো যে, এই আমিটা আমি না, অন্যজন, তবে তোমার কেমন লাগবে?
– তোমার এই তুমি আর আমির প্রশ্ন শুনলে আমার কাছে অবাক লাগে! আমিটা আমি না এটা কোন ধরনের কথা? কি সব সাহিত্যের কঠিন কথা!
হঠাৎ সামনে হাজির ছোট্ট একটি মেয়ে। ধূলাতে জট বেঁধেছে তার চুলে। নোংরা কুঁচকে যাওয়া জামা আর দেহ ভরা ধূলা-বালি। করুণ কণ্ঠে চাইতে থাকে ‘৫টা টাকা’। প্রলয় মানি ব্যাগে হাত দিয়েই চিৎকার করে হায় হায়! আমার সব টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে!
-ছোট্ট মেয়েটি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে, স্যার আমি আপনার টাকা চুরি করিনি, বিশ্বাস করেন।
প্রলয়- নারে তোকে চোর ভাবছিনা। মনে হয়, পকেট থেকে পড়ে গেছে।

অর্পিতার খুব মায়া হলো। মেয়েটার হাতে গুঁজে দিলো ১০০ টাকা। চোখ ছলছল করে উঠল মেয়েটির। মাথা নিচু করে, দৌড়ে চলে গেল।

দুই.
পরের দিন দুপুর বেলা পাগল প্রায় হয়ে ছুটে এসেছে প্রলয়। দুচোখ ফোলা, সিঁদুর লালচে। মেডিকেলের কলেজের ওয়েটিং রুমে বসে আছে প্রলয়। কলেজের অফিস রুম থেকে ডেকে পাঠানো হলো তাকে।

অর্পিতা- একি প্রলয়, তোমাকে এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন?
-আমার হোস্টেলের রুম থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ক্যামেরা চুরি হয়ে গেছে। এই মাসের খরচ চালানোর ২০ হাজার টাকাও নাই হয়ে গেছে।
– কি বলছো তুমি!
– অর্পিতা, আমাকে এক লক্ষ টাকা ধার দিতে পারো?
– এতো টাকা! তুমি চিন্তা করো না, মার গহনা বিক্রি করে তোমাকে টাকা দিবো। আমি চাই তুমি ভালো থাকো।
– থ্যাংকস ডিয়ার, তুমি না থাকলে আমি পথে বসে যেতাম।
– প্রলয়, আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে আলোর পথে নিয়ে যাবো।

৬ মাস পরের ঘটনা। মেডিকেলের ২য় বর্ষের ছাত্রী সে। অর্পিতাকে বিয়ে দিতে চায় তার আন্টি (সৎ মা)। সৎমায়ের সাথে অর্পিতার বাবাও রাজি হন। এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাথে ঠিক হয় বিয়ে। প্রলয় দায়িত্ব নিতে চায় না। বলতে থাকে তার অসহায়ত্বের কথা, বেকারত্বের কথা।

প্রলয় বলে- দেখো, আমরা দুজনেই এখনো ছাত্র, তোমার দায়িত্ব নেবার মতো যোগ্যতা এখনো আমার নায়। আমি প্রতি মাসে তোমার কাছে থেকে হাজার হাজার টাকা নিই। আমি কিভাবে তোমার দায়িত্ব নিবো?
অর্পিতা- আমরা দুইজনে টিউশনি করে সংসার চালাবো। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবেই।
ঘর বাঁধার স্বপ্ন আর প্রলয়কে হারানোর ভয়ে, অর্পিতা বাবার বাড়ি ছাড়ল। বিয়ের দুইদিন পূর্বে পালিয়ে গেল প্রলয়ের সাথে।

তিন.
সুসজ্জিত মনোরম একটি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট ভর্তি কয়েকজন যুবতী মেয়েরা আধুনিক পোশাক আর উগ্র সাজে সজ্জিত সবাই। প্রতিটি কক্ষে নারী আর পুরুষ।

নম্বর দেয়া ৬টি কক্ষ। পছন্দমত তরুণীকে নিয়ে, টাকা জমা দিয়ে একেকজন পুরুষ ঢুকছে একেকটি কক্ষে। অর্পিতার মাথা ঘুরাতে থাকে।

তরুণীদের লিডার ভ্রূ উঁচু করে প্রশ্ন করে, গাধা তুমি, মেডিকেলের ছাত্রী হয়েও ভয়াবহ মাদকাসক্তকে চিনতে পারোনি! নেশার লোভে তোমাকে বোকা বানাত, আর তুমি টাকা দিতা। তোমার প্রলয়, তোমাকে এখানে বিক্রি করে দিয়েছে।

এই কথা শুনে মূর্ছা যায় অর্পিতা। জ্ঞান ফিরে নিজেকে দেখে হাসপাতালের বিছানায়। জোরে পড়ে যাওয়ার জন্য মাথা ফেটে যায়। জ্ঞান ফিরেই চিৎকার করে ওঠে সে। হাসপাতালের ডাইরেক্টর অর্পিতার বাবার বন্ধু। তিনি অর্পিতাকে ফিরিয়ে আনেন, এই নোংরা জগৎ থেকে। কিন্তু অর্পিতাকে গ্রহণে অস্বীকার করে তার বাবা মা।
অর্পিতার অভিভাবক হয়ে যায় ডাইরেক্টর স্যার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পোস্ট মর্টেম ক্লাসে যায় অর্পিতা। জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেও, লেখাপড়ার যুদ্ধে প্রথম হয় সে।

ছোট্ট বেলা থেকেই বড় ডাক্তার হবার স্বপ্ন অর্পিতার। কাটাছেড়া, সেলাই, ড্রেসিং-এ ভীষণ দক্ষ সে। স্যার এর পাশে দাঁড়ায় সে। বেওয়ারিশ একটি লাশ উল্টো হয়ে পড়ে আছে চাটাইয়ের উপর। ডোম লাশটিকে সোজা করতেই, মুহূর্তেই নাই হয়ে যায় তার পৃথিবী। পায়ের তলা থেকে সরতে থাকে মাটি। চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে গাল বেয়ে।

চোখের সামনে টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় প্রলয়কে। হাতুড়ি দিয়ে ফাটানো হয় মাথা। পোস্ট মর্টেমের জন্য মগজ বের হতে থাকে ছিটকে। সহ্য করতে পারে না অর্পিতা। আবারো অজ্ঞান হয়ে যায়।

৭ মার্চের ভাষণের ওপর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর খ্যাতিমান লেখকদের বিশ্লেষণধর্মী বই ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : রাজনীতির মহাকাব্য’ এর মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে বইটির ইলেকট্রনিক ভার্সন (ই-বুক) এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের উদ্বোধন করেন তিনি।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বইটির এ তিন সংস্করণের উদ্বোধন করেন।

সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ জাতির ইতিহাসে এক অনন্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিষয়টিকে অবিস্মরণীয় করার জন্য এ ভাষণের ২৬টি বাক্যের ওপর দেশের খ্যাতিমান লেখকদের কাছ থেকে পাওয়া একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রকাশনা বের করছে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগ। এরসঙ্গে ডিজিটাল বুক ও মোবাইল অ্যাপও তারা তৈরি করেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সরবরাহ করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বইটির পরিকল্পনাকারী ও প্রধান উপদেষ্টা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক অধ্যাপক হাশেম খান।

বিশ্লেষণধর্মী এ গ্রন্থের মুখবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে বাছাইকৃত ২৬টি বাক্যের বিশ্লেষণ করেছেন মুস্তফা নূরউল ইসলাম, আবদুল গাফফার চৌধুরী, এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, হাসান আজিজুল হক, অজয় রায়, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, এসএ মালেক, সেলিনা হোসেনসহ কয়েকজন কয়েকজন খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও লেখক।

মুখবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, জাতির পিতার এ কালজয়ী ভাষণে ধ্বনিত হয়েছিল বাংলার গণমানুষের প্রাণের দাবি। এ ভাষণে বাঙালির প্রতি পাকিস্থানী শোষকগোষ্ঠীর হত্যা-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র মূর্ত হয়ে ওঠে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের আবশ্যকতা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল এ ভাষণের মূল লক্ষ্য। শত্রুর মোকাবেলায় তিনি বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দেন-তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।

স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে ৭ মার্চের এ ভাষণ গোটা জাতিকে ঔপনিবেশিক পাকিস্থানী শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে। জাতির পিতার এ সম্মোহনী ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে- লিখেছেন শেখ হাসিনা।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, ই-বুক ও মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধনের পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ষড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন আমাদের দুটো প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা, ৭ মার্চের ভাষণ, মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মের আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় এবং তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের গৌরবগাঁথা পৌঁছে দেয়া একান্ত কর্তব্য ভেবেছি।

বইটির ই-বুক গুগল প্লে-স্টোর ও অ্যাপল স্টোরে বিদ্যমান ‘sheiBoi’ শীর্ষক অ্যাপের মাধ্যমে পাঠ করা যাবে।

এছাড়া 7th March Speech Analysis নামে গুগল প্লে-স্টোর থেকে play.google.com/store এটি ডাউনলোড করা যাবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি অর্থাৎ মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

আরব সভ্যতা টিকবে না : আদোনিস

আরব সভ্যতা টিকবে না কারণ বিশ্ব সভ্যতায় এর কোনো অবদান নেই এমন মন্তব্য করেছেন আরবের আধুনিক সাহিত্যধারার অন্যতম কবি আদোনিস। বৃহস্পতিবার ঢাকা লিট ফেস্টে অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘আদোনিস উইথ কায়সার হক’ নামের এই সেশন সঞ্চালনা করেন সাহিত্যিক ও অনুবাদক কায়সার হক। এ সময় আদোনিস বক্তৃতা করেন ফরাসি ভাষায়। তাঁর বক্তব্য ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন অধ্যাপক আশরাফুল হক চৌধুরী।

আলাপচারিতায় আদোনিস বলেন, কেবল তেল আর ব্যবসা দিয়ে কোনো সভ্যতা টিকে থাকতে পারে না। যেহেতু মানব সভ্যতায় আরবের বিশেষ কোনো অবদান নেই তাই এ সভ্যতা টিকবে না। আরব বসন্ত নিয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করলেও বলেন, এটা আমেরিকারই তৈরি।

নিজে বামপন্থী এ কথা অকপটে স্বীকার করে আদোনিস বলেন, আমি সবসময় মানুষের পক্ষে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ কখনও থেমে থাকবে না।

তরুণদের পাঠাভ্যাস নিয়েও বেশ আশাবাদী তিনি। তার মতে মানুষ আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি বিষয় পড়ে। তারা পড়ছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। আদোনিস জানান, তাঁর দুই মা। এক মা প্রকৃতি অন্য মা কবিতা। পুরো পৃথিবীকে তিনি একটি ফুলের সঙ্গে তুলনা করেন আর কবিতাকে অভিহিত করেন এর সুগন্ধ হিসেবে।

যদিও প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, মানুষ এখন সুগন্ধ না ফুলের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুুল বলে আখ্যা দেন তিনি। এটা ক্ষমতা ও অর্থ দু’দিক থেকেই বিবেচনা করা যায় বলে জানান আদোনিস। তিনি বলেন, দরজা এখন খোলা, যেন এক রমণী দু-হাত বাড়িয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শকরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তাদের আবদার মেটাতে আদোনিস একটি ছোট্ট আরবি কবিতাও আবৃত্তি করে শোনান।

উল্লেখ্য, আদোনিস আসলে কবির ছদ্মনাম। তার মূল নাম আলী আহমেদ সাঈদ। তিনি যখন কবিতা লেখা শুরু করেন তখন সিরিয়ার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সে সব ছাপানোর জন্য পাঠাতেন। কিন্তু সেগুলো ছাপা হতো না। গ্রিক দেবতা আদোনিস যেমন জন্তুদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন তেমনি তিনিও পত্রিকার সম্পাদকদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছিলেন! এজন্যই এ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন তিনি।

এরপর তার কবিতাগুলো ছাপা হয়। যদিও পত্রিকার লোকজন তাকে সরাসরি দেখার পর আদোনিস বলে মানতে চাননি! তাই তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে তিনিই আদোনিস।

কবিতার খোঁজে সম্মাননা পেলেন ১০ তরুণ কবি

তরুণ কবি ও কবিতা নিয়ে র’দিয়া আইএনসি এবং কথা কবিতা আবৃত্তির উদ্যোগে ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘কবিতার খোঁজে-২০১৭’। সারা দেশ থেকে পাঠানো তরুণ কবিদের ১০টি কবিতা নির্বাচিত করেন জুরি বোর্ড। আয়োজনের সমাপ্তি টানা হয় ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ৬টায় ঢাকার দীপনপুরে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বিশেষ অতিথি ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী অধ্যাপক রূপা চক্রবর্তী ও জলধি সম্পাদক কবি নাহিদা আশরাফী। বক্তব্য রাখেন র’দিয়া আইএনসি’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দ রবিউস সামস, কথা কবিতা আবৃত্তি’র সমন্বয়ক নাজমুল আহসান।

‘কবিতার খোঁজে’র নির্বাচিত কবিরা হলেন- প্রবাল কুমার দাস, বাপ্পি ভূষণ, মোহনা, জেমস আনজুস, মাহবুব রহমান, উজ্জ্বল বাইন, আশিক মিল্টন সরকার, আরিফ শামসুল, মাসুমা রুনা এবং অনিকেত রাজেশ। নির্বাচিত কবিদের হাতে ক্রেস্ট এবং সম্মাননা সনদসহ স্মারক গ্রন্থ তুলে দেওয়া হয়।

সবশেষে আবৃত্তি করেন ড. শাহাদাত হোসেন নীপু, একেএম সামছুদ্দোহা, ফয়জুল্লাহ সাইদ, নাজমুল আহসান, মাসুম আজিজুল বাসার, আবু নাসের মানিক, আহমেদ শিপলু, তামান্না সারোয়ার নীপা, সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ, অম্লান দত্ত অভি, এনাম আজিজুল ইসলাম, কাজী বুশরা আহমেদ তিথি, মিসবাহিল মোকার রাবিন, মাহফুজা আকতার, পলি পারভীন, খালেদ হাসান মুন, খোশনূর তাবাসসুম, শেখ সাদী মারজান, আলমগীর ইসলাম শান্ত।

জীবনে প্রথম সামনাসামনি আবৃত্তি শোনা

৬০ সালের মাঝামাঝি থেকে ৮০ সালের প্রথম দিকে ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলের চোখে কেমন ছিল দেশটি? পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে একটা নতুন দেশের জন্ম হলো সেই ছেলের চোখের সামনে। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে কী কী ধরা পড়েছিল? স্কুলে স্যারদের কানমলা, বন্ধুদের সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট দুষ্টুমি, নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়ানো, অবাক বিস্ময়ে চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধ দেখা এবং তার সবই একটি মধ্যবিত্ত, সাধারণ পরিবারের সন্তান হিসেবে। এসব নিয়েই আমেরিকা প্রবাসী আজাদুল হকের ধারাবাহিক লেখা– আমার শৈশব– আমার কৈশোর…

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের গল্প, টিলো এক্সপ্রেস, সাতচারা খেলা, টেনিস বল দিয়ে বোম্বাসটিক খেলা, জীবনের প্রথম বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয়, প্রথম সিনেমা দেখা, গ্রামের গল্প, পাটখড়ি দিয়ে সিগারেট খাওয়ার গল্প, জ্বিনের কোলে বসার গল্প, এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার গল্প আর মুক্তিযুদ্ধের গল্প– এ রকম নানা ধরনের ছোট ছোট পর্ব নিয়েই আজাদুল হকের ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি শনিবার। খুবই সাদামাটা গল্প অথচ প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এবং সহজপাঠ্য। পড়তে পড়তেই শেষ। একটি পর্ব পড়লেই মনে হবে পরের পর্বে কী হবে? এভাবে তার সঙ্গে আপনারাও ফিরে যেতে পারবেন সেই শৈশবে।

আজাদুল হক টেক্সাসের হিউস্টন শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি একজন তড়িৎ প্রকৌশলী, আমেরিকার ৩য় বৃহত্তম এনার্জি কোম্পানির একটি আইটি ডিপার্টমেন্ট পরিচালনা করেন। তিনি আগে কাজ করেছেন নাসাতে। তবে এসব টেকনোলজি নিয়ে কাজ করলেও তার মন পড়ে থাকে সাহিত্যে, কবিতায়, লেখালেখিতে। এ ছাড়া শখ হিসেবে তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইন করেন, থ্রি-ডি অ্যানিমেশন করেন, ডকুমেন্টরি নির্মাণ করেন, ছবি তোলেন।

পর্ব- ৬.

আমরা একদিন ক্লাস করছি এমন সময় হেডস্যার (হাফিজুদ্দিন স্যার) সাথে আরেকটা ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের ক্লাসে হাজির। আমরা একটু অবাক কারণ সাধারণত হেডস্যার ক্লাস বিঘ্নিত করতে আসেন না, আর আসলেও স্কুলের কাজে আসতেন সাথে দপ্তরি নিয়ে। হেডস্যার আসাতে আমরা একটু নড়েচড়ে বসলাম। ওই দিন আমি আবার একদম সামনের বেঞ্চে ছিলাম। এই জন্য সবকিছু জ্বলজ্বল করছে এখন মনের আয়নায়। আমাদের যে স্যার পড়াচ্ছিলেন- তিনি থামলেন, হেডস্যার তাঁর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে কী যেন বললেন। দেখলাম স্যার খুব আগ্রহ ভরে মাথা নেড়ে সায় দিলেন। তারপর হেডস্যার আমাদের সামনে এসে বললেন, ‘আজ তোমাদের সামনে তোমাদেরই এক বড়ভাইকে উপস্থিত করেছি। ও এই স্কুল থেকেই পাস করেছে। আজ ও তোমাদের আবৃত্তি করে শোনাবে।’

আমাদের এবার ডাবল অবাক হবার পালা। বলে কী, ক্লাস বাদ দিয়ে আবৃত্তি? এই সংস্কৃতির ব্যাপার-স্যাপারগুলোতে আমি আবার ছিলাম (এখনও আছি) পুরোদস্তুর বেগুণ। মানে গুণের ধারে-কাছেও আমি নেই। গান, বাজনা, নাচ- এগুলো আমার কাছে ছিলো দেখার বিষয়, করার নয়। আর ওই দিনের আগ পর্যন্ত আবৃত্তি যে আলাদা কোনো বিষয় হতে পারে, তা আমার মাথায় ঢোকেনি। আমার কাছে আবৃত্তি মানে ছিলো ছড়া বলা। রেডিওতে শুনতাম, টেলিভিশনে দেখতাম- একদল বাচ্চা ফেরদৌসি রহমানের সামনে বসতো, আর বলতো- ‘আপা, আপা, আমি একটি ছড়া বলবো’। সেই পর্যন্তই ছিল আমার ধারণা আবৃত্তি সম্পর্কে। তাই যখন স্যার বললেন, এই ভাইয়া আমাদের সামনে ক্লাস বন্ধ করে আবৃত্তি শোনাবেন, তাতে আমার অবাক না হয়ে আর উপায় আছে?

সেদিন সেই ক্লাসটি ছিল দুপুরের পরের একটা পিরিয়ডে। বাইরে তুখোড় রোদ। আমাদের ক্লাসটা ছিল একতলায় এবং মাঠের পাশেই। ঘাড় ঘোরালেই দেখা যেত মাঠ। আমার স্বভাবই ছিল প্রায়ই এই মাঠের সবুজ ঘাসের দিকে তাকিয়ে দিবাস্বপ্নে মশগুল হয়ে থাকা। প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে বাস্তব থেকে আলাদা করে ফেলে নিজের ভেতর আনাগোনা করার এই অভ্যাস আমার ছেলেবেলা থেকেই। আজ এই এতো বছর পরও দেখছি সেই অভ্যাস চলে তো যায়নি বরং এখন তা আরো বেশি উপভোগ করি। কথাগুলো বলার কারণ আছে।

আমাদের সেই ভাই আমাদের সামনে এসে স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘আমি যে কবিতাটা আবৃত্তি করবো তার নাম ডাহুকের ডাক’। আমি জীবনে এই নাম শুনিনি। এরপর বহুদিন খুঁজেছি কবিতাটি, পাইনি। যা হোক, কথাটা বলার পর তিনি যখন শুরু করলেন– ডাহুকের ডাক বলে, আমার মনে হলো আমার শরীরে কে যেন একটা ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছে! কী সেই দরাজ গলা, কী বাচনভঙ্গী, কী বিশাল মূর্ছনা, কী অপূর্ব সুন্দর গলার ওঠানামা! আমি সম্পূর্ণভাবে মগ্ন হয়ে, বিমোহিত হয়ে, নিষ্পলকে শুনলাম, জানলাম, উপভোগ করলাম- আবৃত্তি কাকে বলে।

অনেকক্ষণ ধরে কোনো কাগজ না পড়ে তিনি আবৃত্তি করেই যাচ্ছেন। আমি বাইরে তাকালাম মাঠের দিকে। অমনি চট করে আমি যেন স্টার ট্রেকের সেই ম্যাটার ট্রান্সমিট করার মেশিনের মধ্যে দিয়ে চলে গেলাম অন্য জগতে। প্রতিদিন আমি এই মাঠের দিকে তাকাই, কিন্তু আজ তা আমার কাছে অন্য রূপে। আমি শুনছি ডাহুকের ডাক আর ভেসে বেড়াচ্ছি যেন বিলের পার ঘেঁষে, কাদাপানিতে পা ডুবিয়ে, নলখাগড়ার ঝোপের ভেতর। কোনো আবৃত্তি যে এতো সুন্দর হতে পারে, তা আমার ধারণায় ছিল না।

আমরা অনেক সময় এই গান, কবিতা, আবৃত্তিগুলোকে সস্তা বিনোদন হিসেবে দেখি, শুনি। কিন্তু এই গান, কবিতা আবৃত্তিই যে আমাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। এদের সাথেই যে আমাদের স্মৃতি, সুখ, দুঃখ ওতপ্রোতভাবে জড়ানো- তা আমরা বুঝতে চাই না। এই শিল্পকে যেসব শিল্পী আমাদের সামনে উপস্থিত করেন তাদের আমরা অনেক সময় হেয় করি, ছোট করে দেখি। তাদের মূল্যায়ন তো দূরের কথা, মনে করি টাকা দিলেই তাদের মূল্যায়ন হয়ে যাবে। তারা সামান্য ভুল করলে তাদের ছাল-পাখনা তুলে লবণ-মরিচ লাগিয়ে দেই। অথচ নিজের জীবনের পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এই শিল্পীরাই রংতুলি দিয়ে এঁকে দিয়েছেন আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায় জমানো সেই স্মৃতিগুলো। সেদিনের সেই নাম না জানা ভাইয়া, আমাকে যে ভীষণভাবে মুগ্ধ। আলোড়িত করেছেন তার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে তার সামান্য এক কবিতা দিয়েই শিখিয়েছেন- কিভাবে আবৃত্তি আত্মস্থ করতে হয়। একজন বাচিকশিল্পীর সেটাই সবচেয়ে পরম পাওয়া।

সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৯ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুফিয়া কামাল ছিলেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে তার জন্ম। তার বয়স যখন সাত বছর তখন তার বাবা নিরুদ্দেশে যাত্রা করেন। ফলে তার মা সাবেরা খাতুন অনেকটা বাধ্য হয়েই বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। এ কারণে তার শৈশব কেটেছে নানার বাড়িতে।

যে পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে পরিবারে নারী শিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতো না। তার নানার বাড়িতে কথ্য ভাষা ছিল উর্দু। সেখানে বাংলা শেখারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বাংলা শেখেন মূলত তার মায়ের কাছ থেকে।

১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা বাসন্তী প্রকাশিত হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামসহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ছিল।

সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠন হাতে নিয়েছে নানা কর্মসূচি।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, এই মহীয়সী নারীর জীবনাদর্শ ও সাহিত্যকর্ম তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমের মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি ও মমতাময়ী মা। বাংলার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তার দৃপ্ত পদচারণা।

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে-সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। ভ্রমণ কাহিনী ‘সোভিয়েত দিনগুলি’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তুরের ডায়েরি’।

সুফিয়া কামাল ৫০টিরও অধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য।

বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে সম্মিলিতভাবে

ইদানীং পত্রপত্রিকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের খবর যখন আমাদের আশান্বিত করে তুলছিল, তখন এই ৪৫ জন ছাত্রীর বিয়ের কারণে পরীক্ষায় না বসার খবরটি আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।

শুক্রবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবরে বাল্যবিবাহের কারণে এই ৪৫ জন ছাত্রীর পরীক্ষায় না বসার বিষয়টি জানা যায়। খবর অনুযায়ী, এই ছাত্রীরা যেসব স্কুলে এত দিন পড়ালেখা করে আসছিল, সেসব স্কুলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নিয়মিত নানা সচেতনতামূলক সভা করা হয়। শ্রেণিকক্ষে বাল্যবিবাহের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ছাত্রছাত্রীদের ধারণা দেওয়া হয়। কিন্তু এসব উদ্যোগ যে খুব একটা কাজে আসেনি, ৪৫ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহের শিকার হওয়াই তার প্রমাণ।

তাহলে করণীয় কী? চলতি বছরেই দেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন হয়েছে। তবে ওই আইনের একটি বিশেষ বিধান অনুযায়ী, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশে এবং পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সম্মতিক্রমে বাল্যবিবাহ হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না। হতে পারে এই ৪৫ জন ছাত্রীর অভিভাবকেরা ওই বিশেষ বিধানের সুযোগ নিয়ে তাদের বাল্যবিবাহ দিয়েছেন।

আমরা মনে করি, কোনো অবস্থায়ই বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাবে না। জরুরি ভিত্তিতে এ আইনটি সংশোধন করা হোক। এর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাঁদের জন্য নিয়মিত আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে, যেখানে তাঁরা বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো ও সুশীল সমাজের সদস্যরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন।

 বাল্যবিবাহ রোধের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।

দুর্বৃত্তদের ধরুন, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

রংপুরের গঙ্গাচড়ার অঘটনটি হঠাৎ করেই ঘটেনি। মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায় অবমাননাকর স্ট্যাটাস দিয়েছেন বলে ৫ নভেম্বর গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করেছিলেন একজন। তাহলে পুলিশ কেন ঘটনাটি দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিল না? তারা আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে হয়তো সেখানকার হিন্দু পরিবারের বাড়িঘরগুলো পুড়ত না। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ লোকদের ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে একজন নিরীহ মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও দুঃখজনক।

এর আগে ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে, ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফেসবুকে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে স্ট্যাটাস দিয়ে দুর্বৃত্তরা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। তারা রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এবং নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে ও জ্বালিয়ে দেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কোনো ঘটনায় এখন পর্যন্ত অপরাধীরা শাস্তি পায়নি।

রংপুরের ঘটনাটি রহস্যাবৃত। সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিই ধর্মীয় অবমাননাকর কোনো স্ট্যাটাস দিয়েছেন, নাকি তাঁকে ফাঁসানোর জন্য কেউ এই দুষ্কর্ম করা হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। কেউ ধর্মীয় অবমাননাকর কিছু করলে দেশের প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার হবে। কিন্তু সেটিকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে কোনোভাবেই সম্প্রদায়বিশেষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া চলতে পারে না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। পাঁচ দিন আগে দায়ের করা মামলার তদন্তের আগেই কেন হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হলো? এর পেছনে মহলবিশেষের উসকানি আছে কি না, সেটিও দেখার বিষয়।

এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। বিশেষ করে আক্রান্ত হিন্দু পরিবারগুলো ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকারের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। যাদের ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়েছে, তারা এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। অবিলম্বে তাদের ঘরবাড়িগুলো পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া প্রয়োজন।

আমরা পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি দাবি করছি। কেউ ধর্মীয় অবমাননাকর কিছু করলে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। কিন্তু তাই বলে ধর্মের নামে সম্প্রদায়বিশেষের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা এবং তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া বরদাশত করা যায় না। অপরাধী যে-ই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

নারীদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা

তবে ঘটনা প্রকাশের পর উপজেলা ছাত্রলীগ তাৎক্ষণিকভাবে আরিফকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে, আইসিটি আইনে হয়নি। আর এখন পর্যন্ত আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা চাই, পুলিশ দ্রুত তাঁকে গ্রেপ্তার করুক।

নারীদের ফাঁদে ফেলে সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা বা এ ধরনের বিকৃতি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ইন্টারনেট, সামাজিক মাধ্যম ও স্মার্টফোনের কল্যাণে এসব যেন অনেক পুরুষের কাছে ডালভাত হয়ে গেছে। ইদানীং এর মাত্রা বেড়ে গেছে, একটি ঘটনা যেন আরেকটি ঘটনাকে উসকে দিচ্ছে।

কথা হচ্ছে সভ্যতার কিছু রীতিনীতি ও মানদণ্ড আছে, সমাজের মানুষকে তা মেনে চলতে হয়। তা না হলে সমাজে নৈরাজ্য দেখা দেয়। এই শিক্ষা লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে পরিবার, তারপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে মানুষ একধরনের বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। এই বন্ধন আলগা হয়ে গেলে অপকর্ম করতে মানুষের বাধে না। এ ছাড়া সমাজে সুস্থ বিনোদনের অভাব আছে। একসময় পাড়া-মহল্লায় খেলার ও নাটকের ক্লাব ছিল, স্কুলে গ্রন্থাগার ছিল। এখন ওসবের বালাই নেই, যার অভাবে মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেটের গঠনমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে নীতি, নৈতিকতা ও সামাজিকতার শিক্ষা থাকতে হবে। সর্বোপরি আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এসব করে কেউ পার না পায়। নারীরা এখন বাল্যবিবাহ রোধে এগিয়ে এসেছেন, ঘাসফুলের মতো সংগঠন হয়েছে, এবার এসব হয়রানি রোধেও নারীরা এগিয়ে আসতে পারেন। সমাজের সব সচেতন মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

ঢাকার রাস্তাঘাটের দুর্দশা

ডিএসসিসি সরকারের কাছে টাকা চেয়েছে ১৫৮ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করার জন্য। সংস্থাটির দাবি হলো এই সড়কগুলো বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় সড়কের ক্ষতি হয়েছে এ কথা সত্য, কিন্তু পুরো সত্য নয়। সড়কগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও আগেভাগেই ভেঙেচুরে গেছে। অনেক সড়ক মেরামতের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সেগুলো টেকসই হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির ফলেও অনেক ভালো সড়কের ক্ষতি হয়েছে। নগরের অনেক এলাকার বাসিন্দাদের একটা সাধারণ অভিযোগ, ‘এই ভালো রাস্তাটা খুঁড়ে নষ্ট করা হয়েছে।’

সুতরাং শুধু বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণ দেখিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য সরকারের কাছে অর্থ চাওয়া হলেও এমন নিশ্চয়তা মিলবে না যে সরকারের দেওয়া অর্থের সদ্ব্যবহার হবে। প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে সড়ক মেরামতের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি হবে না; মেরামতকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা হবে যেন তা টেকসই হয় এবং অল্প দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে না যায়। যেসব সড়ক মেরামতের জন্য সরকারের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এমন অনেক সড়কও আছে যেগুলো এক বা দুই বছর আগেই মেরামত করা হয়েছে।

সুতরাং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সড়কগুলোর মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কোনো গাফিলতি, অনিয়ম, দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না। কোনো সড়ক তার স্বাভাবিক মেয়াদের আগেই নষ্ট হলে সেটি নির্মাণ বা মেরামতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনীয় পাথর-বালুর পরিবর্তে শুধু আলকাতরার প্রলেপ বুলিয়ে সড়ক মেরামতের অভিযোগ বিস্তর পাওয়া যায়, কিন্তু এ ধরনের অপরাধের জন্য কখনো কারও শাস্তি হয় না।

ডিএসসিসি সরকারের কাছে আরও প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা চেয়েছে ৮০ কিলোমিটার ফুটপাত, ১৬৬ কিলোমিটার নর্দমা এবং সোয়া ৫ কিলোমিটার সড়ক বিভাজক মেরামত ও নতুন করে নির্মাণ ও উন্নয়নকাজের জন্য। এ বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য: সরকারের অর্থের সদ্ব্যবহার করতে হবে।