কবরের আজাব হতে মুক্তির আমল

পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, সে কবরে আজাব ভোগ করতে আগ্রহী। জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন ও শাস্তি ভোগ করার লোকও পাওয়া যাবে না। বরং সবাই চাইবে আখিরাতের বিশাল জিন্দেগিতে আল্লাহর রহমত লাভ করে তাঁর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে চিরশান্তির স্থান জান্নাত লাভ করতে। কবরের জিন্দেগিতে শান্তিতে থাকতে। তাই কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে মুক্তি লাভের আমল জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-

কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে হলে চারটি বিষয়ের ওপর  আমল করতে হবে, আর চারটি কাজ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মানুষের জরুরী।

যে আমল গুলো করতে হবে
ক. যথাসময়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
খ. বেশি বেশি সাদকা করতে হবে।
গ. কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে।
ঘ. বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করতে হবে। এ আমলগুলি কবরকে আলোকিত ও প্রশস্ত করে।

যে আমল থেকে বিরত থাকতে হবে
ক. মিথ্যা কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
খ. অপরের সম্পদ তথা পরের হক আত্মসাৎ করা যাবে না।
গ. চোগলখুরী করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঘ. পেশাবের ছিটা হতে বেঁচে থাকতে হবে।

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মদিনা বা মক্কার) কোনো একটি বাগানের পাশদিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তথায় তিনি দু’জন এমন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাদেরকে আজাব দেয়া হচ্ছে অথচ বড় কোনো অপরাধের কারণে আজাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি বললেন, তাদের একজন পেশাব করার সময় আড়াল করতোনা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগাত। (বুখারি)

কবরের আজাব হতে বাঁচার দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এইগুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরয, নফল বা সুন্নত, যে কোনো নামাজে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দোয়াটি পড়তে বলেছেন।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউ’জুবিকা মিন আ’জাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিনিআ’জাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ’ইয়া-ওয়াল্ মামাতি, ওয়া মিং সাররি ফিতনাতিল্ মাসীহিদ্-দাজ্জাল।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আজাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আজাব, এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো। (বুখারি ও মুসলিম)

পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত কাজগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। কবরের আজাব থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাজত করুন। আমিন।

জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : jagoislam247@gmail.com

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

সকাল-সন্ধ্যার ৫ আমল

মানুষ মাত্রই চিন্তা করে কিভাবে নাজাত পাওয়া যায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ সহজ উপায় কি? কোন আমল করলে সহজে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সামর্থ্য হবে। তাই কুরআন এবং হাদিসে অগণিত অসংখ্যা তাসবিহ ও দোয়া বর্ণিত হয়েছে। আজ জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সকাল ও সন্ধ্যার কিছু আমল তুলে ধরা হলো-

সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার দোয়া
১. হাসবিয়াল্লা-হু লা-ইলাহা ইল্লা-হু আ’লাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম। (যাদুল মাআদ) অর্থাৎ- আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তারই উপর নির্ভর করছি, আর তিনি হচ্ছেন মহান আরশের অধিপতি।

ফজিলত : যে ব্যক্তি সকাল এবং সন্ধ্যায় এ দুআ’টি ৭ বার পড়বে, দুনিয়া ও আখিরাতের সব চিন্তা-ভাবনার জন্য  আল্লাহই যথেষ্ট হবেন।

২. বিছমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআ’ছমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামাই ওয়া হুয়াচ্ছামীয়ুল আলিম।(তিরমিযী, যাদুল মাআদ) অর্থাৎ আল্লাহর নামে (আমি এই দিন বা রাত শুরু করছি)- যার নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কেউ কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। তিনি সব শুনেন ও জানেন।

ফজিলত : যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় এ দুআ’ ৩ বার করে পাঠ করেন, আল্লাহ তাআলা তাকে সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকেই হিফাজত করা হয়।

৩. আল্লাহুম্মা ইন্নি আছবাহ্তু আশহাদুকা, আশহাদু জুমলাতা আরশিকা ওয়া মালাইকাতিকা, ওয়া জামীআ খালক্বিকা, ইন্নাকা আনতাল্লাহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসুলুক। অর্থাৎ হে আল্লাহ্ আমি সকাল করছি আপনাকে সাক্ষ্য রেখে, আরশবাহী ফিরিশতাদের সাক্ষ্য রেখে, সমস্ত সৃষ্টি জগতকে সাক্ষ্য রেখে – নিশ্চয়ই আপনিই সেই সত্বা যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার বান্দা ও রাসুল। মাগরিবের পর উপরোক্ত দোয়ায় ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আছবাহতু’ এর স্থলে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আমছাইতু’ অর্থাৎ ‘সকাল করছি’ এর বদলে ‘সন্ধ্যা করছি’ বলবে।

ফজিলত : যে ব্যক্তি এ দু’আ ৪ বার উল্লেখিত নিয়মে পড়বে, ১ বার পড়ার পর তার দেহের এক চতুর্থাংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় বার পাঠের পর অর্ধাংশ, তৃতীয়বার পাঠের পর তিন চতুর্থাংশ ও চতুর্থবার পাঠের পর সম্পূর্ণ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। (যাদুল মাআদ)

৪. রাদ্বি-তু বিল্লা-হি রাব্বাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বিনাও ওয়া বি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলািইহি ওয়া সাল্লাম নাবিইয়্যাও ওয়া রাসূলা। (তিরমিজি)। অর্থাৎ আমি সন্তুষ্ট আছি আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে পেয়ে।

ফজিলত : যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিবের পর) এ দোয়াটি ৩ বার করে পাঠ করবে তার উপর সন্তুষ্ট হওয়া আল্লাহর উপর দায়ীত্ব হয়ে যায়। (তিরমিজি)

৫. সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার- আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা খালাক্বতানি ওয়া আনা আ’বদুকা, ওয়া আনা আ’লা আ’হ্দিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাছত্বোয়াতাতু, আ’উযুবিকা মিন শাররি মা ছানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি, ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লাহ আন্তা।(যাদুল মাআদ)। অর্থাৎ হে আল্লাহ্ তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা। আর আমি সাধ্যমত তোমার অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতির উপর কায়েম আছি। আমি মন্দ যা করেছি তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমার উপর তোমার প্রদত্ত নেয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি। আর আমার গুনাহ্গুলো স্বীকার করছি। অতএব আমাকে ক্ষমা কর। কারণ তুমি ছাড়া গুনাহ্ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।

ফজিলত : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ এ কথাগুলো সন্ধ্যা বেলায় বললে, অতপর সকাল হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তোমাদের কেউ তা সন্ধ্যা বেলায় বললে, অতপর সকালের আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্যও জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী, তিরমিজি)

উপরোক্ত দুআ’গুলো আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে এগিয়ে যাই। পরকালের নাজাতের প্রত্যাশী হই। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। দৈনন্দিন জীবনের দুআ’-আমল ও ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষার আমল

আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন, হে আদম সন্তানেরা! তোমাদেরকে যেন এই শয়তান পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত না করে ফেলে, যেমন তোমাদের মা-বাবাকে পথভ্রষ্ট করে চির সুখের জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল। জাগো নিউজে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হিফাজত থাকার আমল তুলে ধরা হলো-

০২. আমলটি হচ্ছে-
رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ – وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ

উচ্চারণ : রাব্বি আউ-জুবিকা মিন্ হামাযা-তিশ শায়া-ত্বী-ন। ওয়া আউ-জুবিকা রাব্বি আইঁ ইয়াহদুরু-ন।

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আমার প্রভু! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুরা মুমিনূন : আয়াত ৯৭-৯৮)

আল্লাহ তাআলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য উক্ত আয়াতের মাধ্যমে দো‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, শয়তান সব কাজে সর্বাবস্থায় মানুষের কাছে আসে এবং সব সময় অন্তরকে পাপ কাজে প্ররোচনা দিতে থাকে। ঐ প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য এই দোয়াটি শিখানো হয়েছে।

জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : jagoislam247@gmail.com

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

স্বভাবসিদ্ধ সুন্নাতের আমল

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলাম মানব জাতীর জন্য সব সময় কল্যাণের। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে স্বভাবগতভাবে যে কাজগুলো নিয়মিত করতে হয়, সে বিষয়গুলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে ওঠে এসেছে। জাগো নিউজে তা তুলে ধরা হলো-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দশটি কাজ স্বভাবগত- মোচ কাটা,  নখ কাটা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পাকি দেয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের পশম কামানো, পেশাবের পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা এবং শৌচকর্ম করা। মুসআব ইবনে শায়ার বলেন, আমি দশম কথাটি ভুলে গেছি সম্ভবত তা হলো কুলি করা। (নাসাঈ)

হাদিসের শিক্ষা-
ক. পানি খাওয়ার সময় মোচে পানি না লাগে এ পরিমাণ মোচ ছোট রাখা।
খ. নখ কাটা, যাতে নভের ভিতর ময়লা জমে না যায়।
গ. শরীরের যে সমস্ত জায়গায় পানি পৌঁছা সহজ নয় তা ভালোভাবে ধৌত করা।
ঘ. দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমাণ লম্বা রাখা।
ঙ. নাক পরিষ্কপা রাখা
চ. মুখের দুর্গন্ধ থেকে হিফাজত থাকতে খাওয়া-দাওয়া, ওজু, গোসলের পূর্বে মিসওয়াক ও উত্তমরূপে কুলি করা।
ছ. বগলের অযাচিত পশম উপড়ে ফেলা।
জ. নাভির নিচের পশম ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই পরিষ্কার করা।
ঝ. পেশাব ও সৌচকার্যে পানি ব্যবহার করে উত্তমরূপে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

উপরোল্লিখিত ফিতরাত বা স্বভাবগত হওয়ার অর্থ এ কাজগুলো ইসলাম পূর্ব সব দ্বীনের অংশ। সমস্ত নবি-রাসুলগণ এর শিক্ষা দিয়ে গেছেন। যেন এগুলো স্বভাবেরই চাহিদা। যে কারণে উপরোক্ত বিষয়গুলো কোনো নবির শিক্ষা থেকেই বাদ যায়নি।

আল্লাহ তাআলা এ হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : jagoislam247@gmail.com

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

ইবাদত কবুলে যে র্শতগুলো মেনে চলা আবশ্যক

আমলে সালেহ বা নেক কাজই হলো ইবাদত। আল্লাহ তাআলা তাঁর ইবাদত-বন্দেগি তথা দাসত্ব করার জন্যই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ কারণেই দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তিতে আমলে সালেহ-এর বিকল্প নেই। তবে সে আমলে সালেহ-এর জন্য শর্ত হলো ঈমান।

তাইতো আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় ঈমানের সঙ্গে সঙ্গে আমলে সালেহ-এর কথা বলেছেন। কেননা ঈমানবিহীন আমলে সালেহ বা ভালো কাজের কোনো দাম নেই।

আর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমল অল্প হোক; কিন্তু ঈমান মজবুত হতে হবে। নাজাতের জন্য অল্প আমলই যথেষ্ট।’

আমলে সালেহ তথা ইবাদত বন্দেগি আল্লাহ তাআলার দরবারে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া আমল তথা ইবাদত-বন্দেগি কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। আর তাহলো-

ইলম বা জ্ঞান অর্জন
ইলম বা জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা। আমলে সালেহ তথা ইবাদত-বন্দেগির জন্য জ্ঞান থাকা আবশ্যক। না জেনে আল্লাহ তাআলার ইবাদত সম্ভব নয়। আমল করার জন্য ঐ আমলের জ্ঞান সঠিকভাবে অর্জন করা জরুরি।

এ জন্য ইলম ছাড়া আমল বিশুদ্ধ হওয়া কঠিন। আর ঐ আমলই কবুল হয়, যা সহিহ এবং বিশুদ্ধ হয়। আর ইবাদতে ভুল হলে দুনিয়া ও পরকালের জিন্দেগি বরবাদ হয়ে যাবে।

নিয়তের বিশুদ্ধতা
নিয়তের বিশুদ্ধতা ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত। নিয়ত ব্যতীত আমল বা ইবাদত প্রতিদান প্রাপ্তির যোগ্য নয়। অধিকাংশ ইবাদত বা আমলই নিয়ত ছাড়া কবুলই হয় না। এ কারণেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি)

সবর বা ধৈর্য অবলম্বন
আমলে সালেহ সম্পাদনে ধৈর্য এবং ধীরস্থির থাকা জরুরি। তাড়াহুড়ো করে আমলে সালেহ বা ইবাদত বন্দেগি করা কোনো মুমিনের কাজ নয়।

নেক আমল করতে গিয়ে বান্দার উচিত, সে যেন অস্থিরতার প্রদর্শন না করে ধীরস্থিরতা ও ধৈর্য অবলম্বনের মাধ্যমে আমলে মনোযোগী হওয়া।

ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা থাকা
ইখলাস ব্যতীত বান্দার কোনো আমলই কবুল হয় না। আমল যেহেতু ইবাদত; আর ইবাদত-বন্দেগিতে বান্দার একনিষ্ঠতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

ঐ আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, যে আমল শুধুমাত্র তাঁর জন্যই করা হয়। দুনিয়ার সব পেরেশানি থেকে মুক্ত হয়ে যে আমল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা হয়।

মনে রাখতে হবে
>> ইবাদত-বন্দেগির জ্ঞান অর্জন করতে হবে;
>> ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকতে হবে;
>> ইবাদত-বন্দেগিতে ধৈর্য তথা ধীরস্থির থাকতে হবে;
>> শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতার সঙ্গে ইবাদত বন্দেগি করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই আমলে সালেহ তথা ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন।

প্রিয়নবির আহ্বান, ‘আমল বা ইবাদত অল্প হোক; তা যেন ঈমানের সঙ্গে হয়, তবে তা অবশ্যই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’ এ হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিন্দুমাত্র হারাম খাদ্য ভক্ষণেও ইবাদত কবুল হবে না

হালাল রুটি-রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশত। হালাল রুটি ও রুজি শুধু নিজের জন্য তা নয়, বরং পরিবারের সবার জন্য প্রযোজ্য। কারণ প্রতিটি খারাপ কর্মের প্রভাব শুধু নিজের ওপরই পড়ে না। তার প্রতিক্রিয়া পরিবার তথা সন্তান-সন্তুতির ওপরও পড়ে। সুতরাং নিজের হালাল উপার্জন দিয়ে জীবিকা অবলম্বন করার পাশাপাশি পরিবারকেও বিন্দু পরিমাণ হারাম ভক্ষণ থেকে হেফাজত করা কালেমায় বিশ্বাসী মুসলমানের ওপর ফরজ।

আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُواْ بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُواْ فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ অর্থাৎ `তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।` সূরা আল-বাক্বারাহ : আয়াত ১৮৮)

দেশে সুদ, ঘুষ, পরের সম্পদ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল, চুরি-ছিনতাই ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্পদের নেশায় মানুষ পাগল হয়ে উঠছে। আমরা একটু ভাবছি না এর পরিণাম কত ভয়াবহ। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ছেড়ে অবশ্যই আমাদের প্রস্থান করতে হবে। সম্পদ তখন আমাদের কোনো কাজেই আসবে না। এ বিষয়ে হাদিসে নববিতে অনেক সতর্কবাণী রয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে দেহে হারাম খাদ্যে উৎপন্ন মাংস রয়েছে তা জান্নাতে যাবে না। নবী (সা.) আরও বলেছেন, হালাল জীবিকা সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ (তাবরানি ও বায়হাকি) ইবাদাত কবুলের জন্য হালাল খাদ্য অন্যতম শর্ত।

হযরত  ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দশ দিরহাম দিয়ে কোনো বস্ত্র ক্রয় করে এবং সেই দশ দিরহামের মধ্যে একটি দিরহামও হারাম হয় তবে যতক্ষণ সেই বস্ত্র তার পরিধানে থাকবে, ততক্ষণ তার নামাজ কবুল হবে না।

হজর যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’ব ইবনে ওজরাকে বলেছেন,  যে দেহের অস্থি-মজ্জা হারাম সম্পদ দ্বারা প্রতিপালিত হয়েছে তা কখনো বেহেশতে প্রবেশ করবে না এবং একমাত্র দোযখই হবে তার জন্যে সঠিক স্থান।

সুতরাং…
হালাল রুটি ও রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশর্তই নয়। হালাল রুজি নিজের ও পরিবারের জন্য ফরজ। আল্লাহ তাআলা হালাল জীবিকা অন্বেষণের তাওফিক দান করুন। হালাল আয়-ইনকাম করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। গুরুত্বপূর্ণ দুআ ও আমল শিখুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

ইবাদত বন্দেগির কুরআনিক পদ্ধতি

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ কথাটি আল্লাহর। অথচ বান্দা তার সুফল লাভে ব্যর্থ। ইবাদত-বন্দেগিসহ দৈনন্দিন জীবনের কোনো কাজেই বান্দাহ মজা পায় না। আল্লাহ তাআলা বান্দার কল্যাণে সমগ্র জাহান সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন সব উপাদান, যা প্রয়োজন নিত্যদিন।বান্দা সব কার্যক্রমের  স্বাদ তখনই পাবে, যখন আল্লাহ প্রদর্শিত পথে সে চলবে।কিভাবে ইবাদতে পরিপূর্ণতা লাভ হবে, বান্দা পাবে পরিপূর্ণ স্বাদ তা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

এক. আল্লাহকে পূর্ণ ভালোবাসা অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা বা আল্লাহ যা ভালোবাসেন তাঁর ভালোবাসাকে অন্য সব বস্তুর ওপর প্রাধান্য দেয়া।

দ্বিতীয়. আল্লাহর নিকট পূর্ণ বিনয়-নম্রতা ও আনুগত্য প্রকাশ করা অর্থাৎ বান্দা আল্লাহ তাআলার আদেশসমূহ পালনের এবং নিষেধাজ্ঞাসমূহ হতে বেঁচে থাকার মাধ্যমে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করবে।

সুতরাং পূর্ণ বশ্যতা, বিনয়-নম্রতা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভয়-ভীতির সঙ্গে পূর্ণ ভালবাসাকে ইবাদত বলে। এইরূপ আমলের মাধ্যমেই বান্দা স্বীয় প্রভূর ভালোবাসা লাভ করে এবং সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়।

আল্লাহ ফরজ বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকে ভালোবাসেন। পাশাপাশি বান্দার নফল ইবাদত যত বেশি বৃদ্ধি পাবে ততই তার নৈকট্য ও মর্যাদা আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুনায় এই মাধ্যমই আল্লাহর পক্ষথেকে মুমিন বান্দার নাজাতে উপায়।

আল্লাহ বলেন, `তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে, অত্যন্ত সংগোপনে। তিনি সীমা লংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। (সূরা আ`রাফ : আয়াত ৫৫)

আল্লাহ ঘোষণা অনুযায়ী ইবাদত করবে বিনয়ের সহিত গোপনে। গোপনে ইবাদত করার অবস্থা থাকা সত্তেও মানুষ প্রকাশ্যে লোক দেখানোর জন্যও ইবাদত করে। তাই আল্লাহ বলেছেন তোমরা ইবাদতে সীমা লংঘন কর না। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা যখন দোয়া করবে তখন কোনো শব্দ শোনা যাবে না।
ইবাদতে আমাদের করণীয়-
১. ইবাদত গোপনে করতে হবে;
২. ইবাদতে বিনয় থাকতে হবে;
৩. ইবাদতে কাঁদতে হবে।
৪. কান্না না আসলে কান্নার ভান করতে হবে
৫. লোকে আবেদ হিসেবে সম্মান করবে এই নিয়্যত ইবাদত করা যাবে না
৬. প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে
৭. যা সম্ভব নয় এমন দুআ করা যাবে না। যেমন- নবী হওয়ার দোয়া ইত্যাদি।
৮. নামাজি এমনভাবে নামাজ পড়বে, যাতে পাশে শয়নকারী স্ত্রীও টের না পায়
৯. হাফেজ কুরআন তিলাওয়াত করবে, যাতে অন্য কারও নিকট হাফেজ পরিচিতি প্রকাশ না হয়।

আল্লাহ যেন সমগ্র মানবজাতিকে নিরবে অত্যন্ত গোপনে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করার তাওফিক দান করেন। ইবাদত-বন্দেগিতে যেন আল্লাহ ভয় এবং মহব্বত থাকে। আল্লাহ আমাদের তাঁর শিকানো পদ্ধতিতে তাঁকে স্মরণ করার, সর্ব প্রকার লোক দেখানো ইবাদত-বন্দেগি থেকে হেফাজত করে সঠিক নিয়মে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করেন। আমিন। জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

ইবাদত-বন্দেগিতে একনিষ্ঠতার গুরুত্ব ও মর্যাদা

ইবাদত-বন্দেগি হবে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আর এ ইবাদত-বন্দেগিতে যদি একনিষ্ঠতা না থাকে, গভীর মনোযোগ না থেকে তবে তা হবে নিষ্ফল। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় একনিষ্ঠভাবে ইবাদত-বন্দেগি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রকৃতপক্ষে ইবাদতে ইখলাছ বা একনিষ্ঠতাই হলো ইসলামের মূল বিষয়। আল্লাহ তাআলা তা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করতে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করতে এবং জাকাত আদায় করতে আর এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সুরা বাইয়্যেনাহ : আয়াত ৫)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে শিরক হতে তাওহিদের প্রতি এবং দুনিয়ার সব ধর্ম হতে বিমুখ হয়ে শুধুমাত্র ইসলামের প্রতি ঝুঁকে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেভাবে আদিষ্ট হয়েছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমি আদিষ্ট হয়েছি আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) করি।’ (সুরা যুমার : আয়াত ১১)

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ইখলাছ তথা একনিষ্ঠতাপূর্ণ ইবাদতকে তার জন্য নির্দিষ্ট করেছেনে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে এ কিতাব যথাযথভাবে নাজিল করেছি; সুতরাং আপনি আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর উপাসনা করুন। জেনে রাখুন! খাঁটি আনুগত্য শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই প্রাপ্য।’ (সুরা যুমার : আয়াত ২-৩)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নেক আমল তথা ইবাদত-বন্দেগির জোর তাগিদ দিয়েছেন।

উল্লেখিত আয়াতগুলো থেকে এ কথা পরিষ্কার যে, ‘ইসলামে ইবাদত-বন্দেগিতে একনিষ্ঠতা এক গুরুত্বপূর্ণ শর্তের নাম। দুনিয়া আগমনকারী সব নবি-রাসুলগণই ইবাদত-বন্দেগিতে একনিষ্ঠতার প্রতি আদিষ্ট হয়েছেনে।

পরিশেষে…
ইসলামি শরিয়তের সব দিক ও শাখায় আল্লাহর হুকুম পালনে এবং তার নৈকট্য অর্জনে একনিষ্ঠতার বিকল্প নেই। নিঃসন্দেহে নবি-রাসুলগণের দাওয়াতের মূলমন্ত্রেই ছিল ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা। তাওহিদ ও ইখলাস হলো কলব বা হৃদয়ের কর্মের সর্বোচ্চস্তর।
আল্লাহর দাসত্ব হলো অন্তরের কাজ। যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা দাসত্ব করা হয় কিন্তু মানুষের অন্তর ইখলাস ও তাওহিদ থেকে শূন্য থাকে; তবে সে যেন একটি মৃত দেহ; যার কোনো রূহ নেই। আর নিয়ত হলো অন্তরের আমল।

আর এ ইখলাস তথা একনিষ্ঠতাই হলো ইবাদত কবুলের দু’টি শর্তের মধ্যে একটি। তাই ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা ব্যতিত ইবাদত কবুল হবে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামি শরিয়তের প্রতিটি কাজে মনে মননে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। ইখলাসের মাধ্যমে ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আমল কবুলে ইখলাসের গুরুত্ব

দৈনন্দিন জীবনে মানুষের প্রতিটি কাজই ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মানুষে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কুরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনাই মানুষের একমাত্র কাজ। তবে মানুষের প্রতি কাজেই ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার গুরুত্ব অনেক বেশি।

জান্নাত লাভে ইখলাসপূর্ণ ইবাদতের গুরুত্ব যেমন বেশি তেমনি মানুষের আমল কবুল হওয়ার জন্য ইখলাসপূর্ণ ইবাদতও জরুরি। ইখলাস তথা এননিষ্ঠতাকে আমল কবুলের পূর্বশর্ত করা হয়েছে।

আল্লাম ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘দু’টি শর্ত সমন্বয় ব্যতিত আল্লাহ তাআলা বান্দার কোনো আমলই গ্রহণ করবেন না।

প্রথমত : মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভে যে আমল করবে, সে আমল ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।

দ্বিতীয়ত : ইখলাস সহকারে শিরকমুক্তভাবে (একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে) ইবাদত করতে হবে। (ইবনে কাসির)

আল্লামা সাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘মানুষের ইবাদত ও আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে ৫টি কাজ আবশ্যক।
>> আল্লাহ তাআলার পরিচয় লাভ করে আমল করা;
>> হক বা সত্য সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে আমল করা;
>> ইখলাস বা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমল করা;
>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত মোতাবেক আমল করা;
>> হালাল খাদ্য গ্রহণ করে আমল করা। (আল-জামে লি-আহকামিল কুরআন : কুরতুবী)

আল্লাহর কাছে মানুষের আমল গ্রহণযোগ্য হতে ইখলাসের গুরুত্ব উঠে এসেছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে পাকে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘যে আমল বা ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইখলাসের সঙ্গে করা হয় না;
আল্লাহ তাআলা সে আমল কবুল করবেন না।’ (নাসাঈ)

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় ইখলাসের সঙ্গে তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।

হাদিসে ইখলাসবিহীন আমলকারীর জন্য পরকালে মহাক্ষতি ও বিপদের সতর্কবাণী করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা যখন সব মানুষকে একত্র করবেন,
তখন একজন ঘোষণাকারী এ মর্মে ঘোষণা করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে
নিবেদিত কাজে অন্য কাউকে তাঁর সঙ্গে শরিক করেছে; সে যেন আল্লাহকে
বাদ দিয়ে সেই শরিকের কাছ থেকে প্রতিদান বুঝে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা
সব ধরনের অংশীদার ও অংশীদারিত্ব থেকে মুক্ত।’ (ইবনে মাজাহ)

সুতরাং আমল কবুলে ইখলাসের গুরুত্ব অনুধাবনে কুরআন ও সুন্নাহরে নির্দেশ মেনা চলা জরুরি। মুসলিম উম্মাহর উচিত কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য একনিষ্ঠভাবে ইবাদত-বন্দেগি করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার প্রতিটি কাজেই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইখলাসের সঙ্গে করার তাওফিক দান করুন। পরকালের সফলতা দান করুন। দুনিয়ার সব আমলগুলো কবুল করুন। আমিন।

মানুষের ভালোবাসা ও নেতৃত্ব লাভের আমল

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ গুণবাচক নামগুলোর জিকির করবে; সে জান্নাতে যাবে।’

দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নামগুলোর জিকির আজকার ও আমলে রয়েছে আলাদা আলাদা ফজিলত ও উপকারিতা।

আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে (اَلْقَيُّوْمُ) ‘আল-ক্বাইয়্যুম’ একটি। মানুষের ভালোবাসা লাভ এবং কোনো কাজ মনমতো সম্পদনের জন্য কাযকরী আমলও এটি।

আল্লাহর গুণবাচক নাম (اَلْقَيُّوْمُ) ‘আল-ক্বাইয়্যুম’-এর জিকিরের আমল ও ফজিলত তুলে ধরা হলো-

 

উচ্চারণ : ‘আল-ক্বাইয়্যুম’
অর্থ : ‘যিনি নিজে চিরস্থায়ী এবং সৃষ্টিজীবকে প্রতিষ্ঠাকারী’

আল্লাহর ‍গুণবাচক নাম (اَلْحَيُّ)-এর আমল

ফজিলত
>> যে ব্যক্তি শেষ রাতে আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْقَيُّوْمُ) ‘আল-ক্বাইয়্যুম’ অধিক হারে পাঠ করে, ওই ব্যক্তিকে জনগণ ভালোবাসতে শুরু করে।

>> যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْقَيُّوْمُ) ‘আল-ক্বাইয়্যুম’-এর অধিক জিকির করে, সে ব্যক্তির সব কাজই তার মনমতো হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব মানুষকে তাঁর গুনবাচক নামের ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (اَلْقَيُّوْمُ) আল কাইয়্যূমু এর বিশেষ ফজিলত মানুষের ভালোবাসা লাভ এবং মন মতো কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।